ভিডিওতে অপরাধের বড় আলামত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে দুঃসহ স্মৃতি। সম্প্রতি টেকনাফের জাদিমোরা শালবন রোহিঙ্গা  শিবিরে ।  ছবি: প্রথম আলো
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে দুঃসহ স্মৃতি। সম্প্রতি টেকনাফের জাদিমোরা শালবন রোহিঙ্গা শিবিরে । ছবি: প্রথম আলো
  • মুঠোফোনের ভিডিওতে মিয়ানমারে সেনাদের অপকর্মের প্রমাণ
  • ভিডিওটি প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটস
  • মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সাক্ষ্য দেয় ভিডিও
  • নৃশংসতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে লাখো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনারা আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও হতে পারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আলামত।

মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওর ভিত্তিতে তৈরি ২ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের একটি তথ্যচিত্র গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটস। ভিডিওতে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো কীভাবে খালি করা হবে তা রাখাইন রাজ্যের অন্য সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে ব্যাখ্যা করছেন মিয়ানমারের এক সেনা। ১৪৬ সেকেন্ডের এই ভিডিও রোহিঙ্গা বিতাড়নে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেটার সাক্ষ্য দেয়।

ফর্টিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথু স্মিথ বলেন, ‘মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ বারবার বলছে তারা রোহিঙ্গাদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেনি। অথচ ভিডিওতে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের কীভাবে তাদের গ্রামছাড়া করা হবে সেটার বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছেন এক সেনা। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, বেসামরিক লোকজনের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর স্বেচ্ছাচারী হামলার ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি আইসিসির কৌঁসুলি এবং অন্যদের কাজে লাগবে।’

ফর্টিফাই রাইটস গতকাল তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, মুঠোফোনে ধারণ করা মূল ভিডিওটির ব্যাপ্তি ছিল ৮ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর তাণ্ডব শুরুর ঠিক তিন দিন পর অর্থাৎ গত বছরের ২৮ আগস্ট এটি প্রথমবারের মতো অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভিডিও থেকেই তথ্যচিত্রটি তৈরি করা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে এরপর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।

কী আছে ভিডিওটিতে

ভিডিওতে দেখা গেছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এক সদস্য স্থানীয় ভাষায় রোহিঙ্গা নয় এমন জনগোষ্ঠীর লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। ওই সেনা রাথিডং শহরের উপকণ্ঠের দুই গ্রাম কিয়াক সার তায়েং ও নং ইয়ে গ্রামের প্রসঙ্গ টেনেছেন। নং ইয়ে গ্রামকে মিয়ানমারের সেনাটি নাটালা গ্রাম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার গ্রামে মডেল বা নাটালা গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন। আরও স্পষ্ট করে বললে বলা যায়, রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলমান অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে নাটালা গ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনী অনেক দিন ধরে উঠেপড়ে লেগেছিল।

মিয়ানমার সেনা গ্রামবাসীকে বলছেন, ‘আমরা তাদের (রোহিঙ্গা) ওপর খুব দ্রুত এবং ভয়াবহভাবে অভিযান চালাব। এ নিয়ে ভাববেন না। আমরা যাওয়ার সময় তাদের গ্রামগুলো পরিষ্কার করে দেব।’ ওই সেনা বলেন, রোহিঙ্গা বিতাড়নের অভিযান চালানোর সময় মিয়ানমারের আদি অধিবাসীরা সুরক্ষিত থাকবে। একদল সেনা আদি অধিবাসীদের জনগোষ্ঠীর গ্রামগুলোর সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকবে। অন্য একটি দল ব্যস্ত থাকবে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নে। এ সময় রোহিঙ্গারা যাতে আদি জনগোষ্ঠীর গ্রামে ছড়িয়ে না পড়ে, সেটা রোধের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের পালিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের অস্তিত্বের পথে হুমকি হিসেবে অভিহিত করে মিয়ানমারের সেনাটি বলেন, তারা পুরো দেশ দখল করে নেবে। তাদের মধ্যে জন্মহার বেশি হওয়ায় জনসংখ্যার বৃদ্ধিও অনেক বেশি। কাজেই তাদের এই জনসংখ্যা মিয়ানমারের জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য হুমকি।

মিয়ানমার সেনারা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সময় সেখানকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উচ্ছৃঙ্খল লোকজনও যুক্ত হয়েছিল। ভিডিওতে দেখা যায়, শিশুসহ স্থানীয় লোকজনকে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালাতে ওই সেনা প্ররোচিত করছেন। তিনি বলছেন, গ্রামের লোকজনের উচিত সেনাদের সহায়তা করা। সেনাদের সাহসী করতে তরবারি ধরতে, লাঠি হাতে নিতে বলেন তিনি।