বিশ্বজুড়ে গণহত্যাকে রুখতে হবে

পাকিস্তানের হানাদার সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর আলবদর, রাজাকার ও জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে ৯ মাসে ৩০ লাখ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা ও পাঁচ লাখ নারীকে নির্যাতন করেছিল। এই নির্যাতন গণহত্যার শামিল। বিশ্বজুড়ে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে এবং শক্তিশালী দেশগুলোর স্বার্থে গণহত্যা এখনো হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে গণহত্যা রুখে দিতে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে।

আজ শুক্রবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণাকেন্দ্র আয়োজিত দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনী দিনে বক্তারা এ কথা বলেন। ২০১৭ সালে ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয়বস্তুর ওপর প্রথম আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

এবারের দ্বিতীয় সেমিনারের বিষয়বস্তু হলো ‘১৯৭১ : মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা ও বিশ্ব’। উদ্বোধনী অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। স্বাগত বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও চিত্রশিল্পী হাশেম খান। ‘বিশ্ব পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ এর ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ভারতের জাতীয় গবেষণা অধ্যাপক জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, এটি একটি (বাংলাদেশ) বিচিত্র দেশ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আছে। বিরোধী শক্তি আছে। মুক্তিযুদ্ধের ওপর এখনো অনেক কাজ বাকি আছে।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া এখনো আমরা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতাই বলতে হবে। গণহত্যার মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, যারা এই অপরাধের মানসিকতার সঙ্গে যুক্ত, এই অপরাধের মানসিকতাকে প্রশ্রয় করে, সমর্থন করে, তারা পরিপুষ্ট হওয়ার একটি সুযোগ পায়। এটি কিন্তু বাংলাদেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই শক্তি জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল। তারাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল, বাংলা ভাইসহ জঙ্গিবাদের উত্থান ও হোলি আর্টিজানের মতো হামলার মতো ঘটনা ঘটিয়েছিল।’

১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আমরা গণহত্যা ও নির্যাতন নিয়ে কেন এত কথা বলি। মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে বিশাল ব্যাপ্তি। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই গণহত্যা সমস্ত সুপার পাওয়ার (বৃহৎ শক্তি) সমর্থন করেছিল। তারা ভাবেনি এই লুঙ্গি পরা-খালি গায়ের মানুষদের জয় হবে। জয় হয়েছে এবং এটা মেনে নিতে হয়েছে।’
অধ্যাপক মামুন বলেন, ‘কিন্তু তারা গণহত্যার বিষয়টি চাপা দিতে চেয়েছিল এই কারণে যে, বাংলাদেশের গণহত্যার যদি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়, তাহলে এই দায় আমেরিকা, চীনকে নিতে হবে। এই কথাগুলো বলার সময় এসেছে। বাইরে যখন গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য যাই তখন সেই সমস্ত দেশ বলে “তোমরা কি গণহত্যা দিবস পালন করো?” আমরা উত্তর দিতে পারি না। কিন্তু আমরা আন্দোলন করেছি। এর ফলে সরকার মেনে নিয়ে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা দিয়েছে। গণহত্যা আগে নিজের দেশে স্বীকৃতি পাওয়া দরকার।’

সেমিনারে ৮টি দেশের ১৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি তাঁদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। তাঁদের মধ্যে উদ্বোধনী দিনের প্রথম কর্ম-অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলজিয়ামের পাওলো কাসাকা, মিসরের মহসিন আরিশি, নেদারল্যান্ডসের থিজস বাউনেট, কম্বোডিয়ার কিও ডং ও বাংলাদেশের জসীম উদ্দীন।

বেলজিয়ামের পাওলো কাসাকা বলেন, বাংলাদেশে মানবতাবিরোধীদের বিচার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়েছে। ১৯৭১ সালে এখানে নৃশংস গণহত্যা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই গণহত্যার বিচারের বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরাকে গণহত্যার বিচারে ব্যর্থ হয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের থিজস বাউনেট বলেন, গণহত্যা ব্যাপক হলে নির্যাতিতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। শুধু গত শতকেই প্রায় ১৯১ মিলিয়ন মানুষ সমষ্টিগত সহিংসতার কারণে প্রাণ হারায়। সেখানে যেমন হাজার হাজার অপরাধী ছিল, তেমনি ছিল অগণিত দর্শক।