খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বাড়ল

খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ ৮ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়েছেন হাইকোর্ট। মেয়াদ বাড়াতে খালেদার আইনজীবীর আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই মেয়াদ বাড়ান।

এ নিয়ে ওই মামলায় ষষ্ঠ দফায় খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বাড়ল। একই সঙ্গে আদালত তিন কার্যদিবসের মধ্যে আপিলকারীপক্ষের (খালেদা জিয়ার) আইনজীবীদের আপিলের ওপর শুনানি শেষ করতে বলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন।

এ দিকে খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর আগামীকাল বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ শুনানি নিয়ে আদেশের এ দিন ধার্য করেন।

ইউনাইটেড বা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশনা চেয়ে ৯ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া রিট করেন; যার ওপর গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার শুনানি হয়। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও মোখলেছুর রহমান।

শুনানির বিষয়ে কায়সার কামাল বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য উনি পছন্দমতো চিকিৎসক বা হাসপাতালের নাম উল্লেখ করতে পারবেন না—এমন কোনো বাধা আইনে ও কারাবিধিতে নেই। সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে, তার মধ্যে তিনজন চিকিৎসক স্বাচিপের দায়িত্বশীল নেতা। রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা হওয়ার কারণে তাঁদের পেশার নীতির ওপর আবেদনকারী বিশ্বাস রাখতে পারছেন না।

আদালত আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় এ বিষয়ে আদেশের জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। শুনানির বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই মেডিকেল বোর্ড গঠনের আগে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ তাঁর দলের অন্য চিকিৎসকেরা তাঁকে দেখতে গেছেন। এই চিকিৎসকেরা যেসব স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা বলেছেন, বর্তমান মেডিকেল বোর্ডও প্রায় একই বিষয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা বলেছে। বোর্ডে যাঁরা আছেন, তাঁরা স্বাচিপের কোনো পদে নেই।

এ দিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিলের ওপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে শুনানি চলছে। আজ বেলা দুইটায় আপিল শুনানির জন্য সময় ধার্য ছিল। এ দিন খালেদার পক্ষে আইনজীবীরা স্বল্প সময়ের জন্য শুনানি মুলতবি চান। দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

পরে খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, স্বল্প সময়ের জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা প্রথমে শুনানি মুলতবি চান। এরপর জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আরজি জানান। তবে তাঁরা আপিলের ওপর শুনানি করেননি। পর পর দুদিন স্বল্প সময়ের জন্য শুনানি মুলতবি নিয়ে শুনানি না করায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে আদালত আগামীকাল বৃহস্পতিবার এবং আগামী রোববার ও সোমবারের মধ্যে আপিলের ওপর তাদের শুনানি শেষ করতে বলেছেন।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে স্বল্প সময়ের জন্য শুনানি মুলতবির আরজি জানিয়েছিলেন আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসাসেবা নিয়ে খালেদা জিয়ার রিটের ওপর অপর একটি বেঞ্চে শুনানি চলায় স্বল্প সময়ের জন্য শুনানি মুলতবি চাওয়া হয়েছিল। আদালত আইনি বিষয়ে তিন দিনের মধ্যে বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করতে বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে আপিলের বিষয়বস্তুর ওপরে বক্তব্য উপস্থাপন এখনো শেষ হয়নি।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। এরপর থেকে খালেদা জিয়া নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পাঁচ মাসের মাথায় ১২ জুলাই আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবার ১৬তম দিনের মতো শুনানি গ্রহণ করেন আদালত।