পদচারী-সেতুতে লাগছে রং, উচ্ছেদ হচ্ছে হকার-ভবঘুরে

শাহবাগের শিশুপার্ক সংলগ্ন পদচারী–সেতুটি রঙ করা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি।  সাবরিনা ইয়াসমীন
শাহবাগের শিশুপার্ক সংলগ্ন পদচারী–সেতুটি রঙ করা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি। সাবরিনা ইয়াসমীন

পথচারীদের পদচারী–সেতু ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল–১ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে পদচারী–সেতু থেকে হকার ও ভবঘুরেদের উচ্ছেদ, ভাঙাচোরা অংশ মেরামত ও রং করা হচ্ছে।

ডিএসসিসি অঞ্চল–১–এর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, সড়কে নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পদচারী–সেতু ব্যবহার অত্যাবশ্যক। কিন্তু এখনো পদচারী–সেতু ব্যবহারে মানুষের আগ্রহ কম। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। নগরবাসীরা যাতে নিজেরাই সেতু ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়, সে জন্য পদচারী–সেতু সংস্কারসহ সৌন্দর্যবর্ধন করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএসসিসির অঞ্চল–১–এর অধীনে ১৭টি পদচারী–সেতু আছে। ইতিমধ্যে আটটি সেতুর কাজ শেষ। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুযায়ী সব কটি সেতুর কাজ করা হবে। মাসখানেক আগে কাজ শুরু হয়েছে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে কাজ শেষ হবে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শাহবাগ এলাকার পদচারী–সেতু দুটি ঘুরে দেখা যায়, সেতুজুড়ে নতুন রঙের প্রলেপ। ভাঙাচোরা অংশগুলো মেরামত করা হয়েছে। গাছের  কয়েকটি নতুন টবও বসানো হয়েছে। কোথাও কোনো ময়লা–আবর্জনা নেই। এমনকি হকারও চোখে পড়েনি।

মাসখানেক আগেও পদচারী–সেতু দুটির বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙা ছিল। রংহীন সেতুর বড় অংশ দিনের বেলায় ছিল হকার আর রাতে ভবঘুরেদের দখলে।

দুপুরের দিকে শিশুপার্কসংলগ্ন পদচারী–সেতু পার হচ্ছিলেন চাকরিজীবী তাহমিনা ফায়েজ। তাহমিনা বলেন, সেতুটিতে উঠেই ভালো লাগছে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন, কোনো হকার বা ভবঘুরে নেই। অথচ আগে সেতুজুড়ে পাঁচ–সাতজন ভবঘুরের স্থায়ী বসবাস ছিল। সেতুতে পাতা তাদের বিছানা ও নানা সরঞ্জামাদির মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হতো। তাহমিনা আরও বলেন, সেতুটি এমন থাকলে এর ব্যবহার বেড়ে যাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা শেষে মাকে নিয়ে সংলগ্ন সেতু দিয়ে সড়ক পার হচ্ছিলেন রাফি ইসলাম। সিঁড়ি বেয়ে সেতুতে উঠে তাঁর মা হোসনে আরা দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এ সময় রাফি প্রথম আলোকে বলেন, আগে সেতুজুড়ে হকার ছিল। ক্রেতারা সেসব দোকান ঘিরে কেনাকাটা করায় ভিড় লেগে যেত। তখন চলাচলে বেশ অসুবিধা হতো।

পদচারী–সেতু সংস্কারে সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগের বেশ প্রশংসা করেছেন পথচারীরা। তবে ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে কি না, এ নিয়ে শঙ্কাও আছে অনেকের। পথচারী এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী হারুন তালুকদার বলেন, পদচারী–সেতু ব্যবহার উপযোগী করার বিষয়টি ইতিবাচক। কিন্তু কত দিন এ রকম থাকবে, সেটা দেখতে হবে। এর আগে কয়েকবার এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কয়েক দিন যেতেই আবার আগের অবস্থা হয়েছে। কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে আন্তরিক হতে হবে।

ডিএসসিসির সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পদচারী–সেতু ব্যবহার করা অভ্যাসের বিষয়। নিয়ম বা জরিমানা করে এ বিষয়ে অভ্যস্ত করানো যাবে না। তাই পদচারী–সেতুগুলো সংস্কার করে, রং করে জনগণের সামনে নতুনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যাতে তাঁরা ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হন। পদচারী–সেতু ব্যবহার করলে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।