বিএনপিতে খালেদার বিকল্প নেই, সরকারি জোটে জট

খালেদা জিয়া, শিরিন আখতার, লে. কর্ণেল জাফর ইমাম ও খায়রুল বাশার মজুমদার
খালেদা জিয়া, শিরিন আখতার, লে. কর্ণেল জাফর ইমাম ও খায়রুল বাশার মজুমদার
>

• ফেনী-১ ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত
• স্বাধীনতার পর থেকে ফেনী-১ আসনে বিএনপি জিতেছে পাঁচবার
• ১৯৯১–২০০৮ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া নির্বাচিত হয়েছেন চারবার
• আসনটির বর্তমান সাংসদ জাসদের (ইনু) শিরীন আখতার
• আগামী নির্বাচনেও শিরীন আখতার জোটের প্রার্থী হতে চান
• স্থানীয় আওয়ামী লীগ জোটকে ছাড় দিতে নারাজ
• আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম আলোচনায়

আর কিছুদিনের মধ্যেই বইতে শুরু করবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। কিন্তু বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনী এলাকা ফেনী-১ (ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া) আসনে দলটির পক্ষ থেকে তাঁর বিকল্প কারও নাম শোনা যাচ্ছে না। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি কারাগারে আছেন।

এ আসনে বর্তমান সাংসদ হলেন ১৪–দলীয় জোটের শরিক জাসদের (ইনু​) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। তিনি আগামী নির্বাচনেও এখানে জোটের প্রার্থী হতে চান। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ জোটকে ছাড়তে নারাজ। দলটির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নামও আলোচনায় রয়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকে ফেনী-১ আসনে বিএনপি জিতেছে পাঁচবার। এর মধ্যে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া নির্বাচিত হয়েছেন চারবার। ২০০১ সালে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই প্রয়াত মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দর। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। এই নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাসদের শিরীন আখতার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৭৩ সালে ফেনী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসা। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে এখানে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী লে. কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম বীর বিক্রম।

আগামী নির্বাচনেও ফেনী-১ আসনে এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়াই ২০–দলীয় জোটের একমাত্র প্রার্থী। তবে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিএনপি যদি এই নির্বাচনে অংশ নেয় এবং খালেদা জিয়া যদি নির্বাচন না করতে পারেন; সে ক্ষেত্রে এ আসনে বিএনপি বা ২০–দলীয় জোটের প্রার্থী কে হতে পারেন, তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে দলীয় নেতা-কর্মীরা এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার বিকল্প কাউকে চিন্তা করছেন না।

স্থানীয় বিএনপির একাধিক সূত্র বলেছে, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় এবং খালেদা জিয়া নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর পরিবারের কাউকে প্রার্থী করা হতে পারে। তবে সম্ভাব্য প্রার্থী কে হতে পারেন, তা বলতে পারছেন না কেউ।

দলের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপারসন প্রার্থী হতে না পারলে কিংবা বিএনপি ভালো প্রার্থী দিতে না পারলে নির্বাচন কেমন হবে বলা মুশকিল।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ফেনী-২ আসনের সাবেক সাংসদ জয়নাল আবদীন বলেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে যায়, কেন্দ্র থেকে যাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, তিনিই দলীয় প্রার্থী হবেন এবং নেতা-কর্মীরা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবেন।

ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুর আহম্মদ মজুমদার, ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান মজুমদার ও পরশুরাম উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেবের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ​তাঁদের দাবি, ফেনী-১ আসনে বিএনপির ভোট অনেক বেশি। খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।

এই নেতারা বলছেন, বর্তমানে অনেক নেতা-কর্মীই মামলা-হামলার ভয়ে এলাকাছাড়া। এখন আবার পুলিশ ‘গায়েবি’ মামলা দিচ্ছে। এ অবস্থায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা নতুন করে হয়রানির আশঙ্কা করছেন। এ কারণে বিএনপির পক্ষে প্রচার অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে।

সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ চলছে। কোনো কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী বা তাঁদের পক্ষে ব্যানার, পোস্টার সাঁটানো হয়েছে এরই মধ্যে। আবার কেউ কেউ জোটের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন।

বর্তমান সাংসদ শিরীন আখতার অনেক আগে থেকেই মাঠে আছেন। এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নানা সভা-সমাবেশে যোগদান, নারীদের নিয়ে উঠান বৈঠক, দলের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন তিনি। শিরীন আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ এলাকা থেকে আগে যাঁরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তাঁরা কোনো দিনও এলাকায় মানুষের সুখ-দুঃখের খবর নিতেন না। আমি সারা বছরই এলাকার মানুষের সঙ্গে আছি।’

ক্ষমতাসীন জোটের কেন্দ্রীয় নেতা শিরীন আখতার মাঠে সক্রিয় থাকলেও আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর পক্ষে তাঁদের সমর্থকেরা প্রচার শুরু করেছেন।

২০০১ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন লে. কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি খায়রুল বাশার মজুমদার। পরে তিনি জোটের প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এই দুজন এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে (নাসিম) প্রার্থী হিসেবে চান স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী। তাঁর বাড়ি ফেনীর পরশুরামে। পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, নাসিম এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তাই দলের নেতা-কর্মীরা তাঁকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পেতে চান।

এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ঢাকাস্থ ফেনী সমিতির সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ ও ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরীও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

২০০৮ সালের নির্বাচন

মোট ভোটার: ৩ লাখ ৪ হাজার ৬৬৪ 

বিজয়ী প্রার্থী: খালেদা জিয়া (বিএনপি)

প্রাপ্ত ভোট: ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২।

নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী: ফয়েজ আহম্মদ (আ.লীগ)

প্রাপ্ত ভোট: ৫৮ হাজার ৫৫১।

 আগামী পর্ব কুমিল্লা–১ আসন নিয়ে