দুই দিন ধরে বন্ধ ফেরি চলাচল, দুর্ভোগে যাত্রীরা

পদ্মা নদীতে নাব্যতা–সংকটে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। ফলে কাঁঠালবাড়ি ঘাটের টার্মিনালে আটকা পড়েছে কয়েক শ পণ্যবাহী ট্রাক। ছবি: প্রথম আলো
পদ্মা নদীতে নাব্যতা–সংকটে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। ফলে কাঁঠালবাড়ি ঘাটের টার্মিনালে আটকা পড়েছে কয়েক শ পণ্যবাহী ট্রাক। ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে দেখা দিয়েছে নাব্যতা–সংকট। এ অবস্থায় গতকাল বুধবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। ফেরি বন্ধ থাকায় এই নৌপথে চলাচলরত যাত্রী ও চালকেরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। 

এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথটি কবে নাগাদ স্বভাবিক হচ্ছে, তা ঠিক করে বলতে পারছেন না কেউ। ফলে পদ্মা পারাপারে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ থেকেই যাচ্ছে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বুধবার সন্ধ্যায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বর্ষার শেষ দিকে এত পলি যে কোথা থেকে আসে? যে পরিমাণ পলি আসার কথা এর চেয়েও বেশি পলি পড়ছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ড্রেজার বসিয়ে আমরা পলি অপসারণের কাজ করছি। যে পরিমাণ পলি অপসারণ করার কথা, আমরা সেই পরিমাণ পলি অপসারণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পানির স্রোত আর পদ্মার বিচিত্র রূপ।’

শাজাহান খান বলেন, আগামী শুক্র ও শনিবারের মধ্যে আমি মনে করি, নৌপথের সমস্যার সমাধান হবে। ফেরি চলাচলও সচল হবে বলে আশা রাখছি।’
ঘাটের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘাটের অবস্থা খুব খারাপ। গত বুধবার থেকে পুরোপুরি বন্ধ ফেরি চলাচল। নদীতে নাব্যতা–সংকট সমাধান না হওয়ায় আমরা একটাও ফেরি ঠিকমতো চালাতে পারছি না।’
সালাম হোসেন আরও বলেন, ‘কবে নাগাদ ফেরি চলাচল সামাধন হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমরা আজ দুটি ফেরিকে পরীক্ষামূলক শিমুলিয়া ঘাটে পাঠাই। কিন্তু ফেরি দুটি বিকল্প পথ ধরে গেলেও ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। তাই নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে ফেরি চলাচল।’

কাঁঠালবাড়ি ঘাটে দাঁড়িয়ে আছে ফেরিসহ বিভিন্ন নৌযান। ছবি: প্রথম আলো
কাঁঠালবাড়ি ঘাটে দাঁড়িয়ে আছে ফেরিসহ বিভিন্ন নৌযান। ছবি: প্রথম আলো

কাঁঠালবাড়ি ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০ দিন ধরে নদীর পানি কমতে থাকায় নৌপথের দুটি চ্যানেলে দেখা দেয় নাব্যতা–সংকট। এ ছাড়া চ্যানেল দুটির আগে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে ডুবোচরের। ফলে ১৩ কিলোমিটার এই নদীপথে ফেরিগুলো চলতে ডুবোচরে বারবার থেমে যায়। নদীর নাব্যতা–সংকট নিরসনে ড্রেজিং বিভাগ একাধিক খননযন্ত্র বসিয়ে পলি অপসারণের কাজ শুরু করে। ড্রেজিং কাজ চলমান থাকায় প্রতিদিন রাত আটটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত সব ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এ পরিস্থিতিতে দিনের বেলায় এই নৌপথে চলাচলকারী ১৯টি ফেরির মধ্যে ৪টি ছোট ফেরি স্বল্প পরিসরে যানবাহন পারাপার করে নৌপথটি কোনো রকম সচল রাখে।
গত মঙ্গলবার রাতে চ্যানেলের মুখে পানি আরও কমে গেলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। পরে আজ দুপুরে পরীক্ষামূলকভাবে কে-টাইপের কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি ফেরি কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে শিমুলিয়া ছাড়া হয়। ফেরি দুটিকে বিকল্প পথ ব্যবহার করে পাঠালেও ডুবোচরে আটকে যায়।
আজ বেলা একটার দিকে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে দিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো পণ্যবাহী ট্রাক। ট্রাকের নিচে চাদর পেতে বিশ্রাম নিচ্ছেন চালকেরা। কেউবা আবার ট্রাকের ওপর বসে আছেন। কেউ ট্রাক পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ ট্রাকের পাশে রান্না করছেন।
ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় কাঁঠালবাড়ি ঘাটের টার্মিনালে আটকা পড়েছে প্রায় দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। টার্মিনালে এভাবে আটকে থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ট্রাকের চালকেরা। চালকেরা বলছেন, ঘাটের টার্মিনালে এভাবে দিনের পর দিন আটকা পড়ে থাকলে ট্রাকে থাকা পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। চাহিদা অনুসারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। সংকটপূর্ণ অবস্থায় যদি চলাচলরত একটি ফেরি দিয়ে যদি শুধু পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করা হতো, তবে সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
চট্টগ্রামগামী পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘খুলনা থেকে ঘাটে এসেছি আজ ১১দিন। ঘাটের টার্মিনালে ট্রাক নিয়ে বসে আছি। সিরিয়াল কবে পাব জানি না। এখানে অলস বসে থাকলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ঘাটের লোকদের কাছে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে, সব ফেরি চলে না। এখান দিয়ে পারাপারের অপেক্ষায় না থেকে অন্য পথ ধরে গন্তব্যে যান।’
কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট কুশল কুমার সাহা বলেন, ঘাটের টার্মিনালে প্রায় দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রয়েছে। এ ছাড়া ঘাটের সংযোগ সড়কগুলোতে ছোট–বড় যানবাহনের চাপ রয়েছে। তবে এখনে যানবাহন নিয়ে বসে না থেকে বিকল্প পথ ধরে চলে যাচ্ছে। তাই চাপ তেমন নেই। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক না হলে ঘাটে যানবাহন পারাপার সচল হবে না।