আমীর খসরু ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দুদকের

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী তাহেরা আলমের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দুদকের পরিচালক কাজী শফিকুল আলম এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর চিঠি দিয়েছেন।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে বেনামে পাঁচ তারকা হোটেল ব্যবসা, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনসহ মানি লন্ডারিং করে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং নিজ নামে শেয়ার কেনাসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। দুদক জানতে পেরেছে, তাঁরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই তাঁদের বিদেশযাত্রা রহিত করা জরুরি।

দুদক সূত্র জানায়, এ বছরের ১৬ আগস্ট অবৈধ লেনদেন, মুদ্রা পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আমীর খসরুকে তলব করে দুদক। দুদকের পরিচালক কাজী শফিকুল আলম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে ২৮ আগস্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যকে সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। ওই দিন দুদকে হাজির না হয়ে সময়ের আবেদন করেন আমীর খসরু। পরে তাঁকে ১০ সেপ্টেম্বর দুদকে হাজির হতে চিঠি দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতে রিট মামলা বিচারাধীন থাকার কারণ দেখিয়ে আমীর খসরু হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চান। চিঠিতে উচ্চ আদালতে করা রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নিতে অনুরোধ জানান তিনি।

দুদক সূত্র জানায়, গত ১৩ আগস্ট সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে হাজির হতে চিঠি দেওয়া হয়।

গত ৩ সেপ্টেম্বর আমীর খসরু মাহমুদকে দুদকে হাজির হওয়ার নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর আমীর খসরু মাহমুদকে দুদকে হাজির হওয়ার নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ।

১৬ সেপ্টেম্বর ওই রিট সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। ফলে আমীর খসরু মাহমুদকে দুদকে হাজির হতেই হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর আমীর খসরুর মালিকানাধীন হোটেলে হানা দিয়ে সেখান থেকে অনুসন্ধান–সংক্রান্ত নানা তথ্য সংগ্রহ করে দুদকের একটি দল।

এর আগে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারায় এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয় চট্টগ্রামে। মামলার এজাহারে বলা হয়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলেন। ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রে নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশে তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। এটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কণ্ঠ বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ক্লিপে কুমিল্লা থেকে নওমী নামের এক কর্মীর সঙ্গে একজনকে কথা বলতে শোনা যায়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে লোকজনকে নামানোর জন্য কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে।

এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে বিএনপির শীর্ষ আট নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। তাঁদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, সন্দেহজনক ব্যাংক লেনদেনসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে বলে দুদক বলেছে।

এপ্রিলে বিএনপির যেসব নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তাঁরা হলেন স্থায়ী কমিটির চার সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জা আব্বাস; দুই ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও এম মোর্শেদ খান; যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। এ ছাড়া এম মোর্শেদ খানের ছেলে খান ফয়সাল মোর্শেদ খানের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান হচ্ছে।

দুদকের মামলায় সাজা পেয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া বিএনপির ২৫ জনের বেশি জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধেও দুদকের করা দুর্নীতির মামলা চলছে। দলটি দীর্ঘদিন ধরে দুদকের সমালোচনায় মুখর। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ আরেক নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামল দুদক।