'আমি শিক্ষক নামের কলঙ্ক'

‘আমি শিক্ষক নামের কলঙ্ক। আমি ভুল করেছি।’ পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবির হাতে আটক হওয়ার পর শিক্ষক খলিলুর রহমান এভাবেই তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান। আটক করা হাসিনা আক্তার বলেন, ‘আমার সন্তানেরা অন্য জায়গায় পরীক্ষা দিয়ে টেকেনি। তাই আমি প্রশ্ন কিনতে এসেছিলাম।’

গতকাল বৃহস্পতিবার ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রি ও কেনার অভিযোগে ১০ জনকে আটক করে ডিবি। তাঁদেরই দুজন খলিলুর রহমান ও হাসিনা আক্তার।

ডিবি বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লোভের ফাঁদে ফেলে আগ্রহীদের খুঁজে বের করে এমবিবিএসে ভর্তির ভুয়া প্রশ্ন সরবরাহ করত একটি চক্র। এই চক্রের মূল হোতা একজন কর কর্মকর্তা। কয়েকজন ছাত্রও জড়িত। ভুয়া প্রশ্ন দিয়ে একেকজনের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন তাঁরা। তাঁদের ফাঁদে পা দিতেন অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মহাখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিজান চালিয়ে ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রির তিন সদস্য, তিন শিক্ষার্থী ও চারজন অভিভাবককে আটক করেছে ডিবি।

আটক হওয়া চক্রের সদস্যেরা হলেন কর অঞ্চল-৮–এর কর্মকর্তা আবুল হোসেন ওরফে শান্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান ও ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এহসানুল হক। তিন শিক্ষার্থী হলেন জাহিদুল ইসলাম, রকিবুল হাসান ও মাহিমা আফরীন। চার অভিভাবক খলিলুর রহমান, মাহবুবুর রহমান, আবদুল মান্নান ও হাসিনা আক্তার।

ডিবি উত্তরের উপকমিশনার মশিউর রহমান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আটক ব্যক্তিরা একটা ফাঁদ তৈরি করতেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগ্রহীদের খুঁজে বের করতেন তাঁরা। এঁদের একজনের মামা বিজি প্রেসে চাকরি করেন—এমনটা বলতেন ওই আগ্রহীদের। বিজি প্রেসে এবারের প্রশ্ন ছাপা হবে। তাঁরা জানান, ওই প্রশ্ন তাঁরা পেয়েছেন। এই প্রশ্ন সরবরাহের মাধ্যমে একেকজনের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৪ লাখ টাকা করে নিতেন তাঁরা।

মশিউর রহমান জানান, গতকাল শান্ত ও আশিকের কাছ থেকে প্রশ্ন নিতে আসেন রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের এক ছাত্র এবং আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের এক ছাত্রী ও ছাত্র। এ ছাড়া ওই চার অভিভাবক আসেন। তাঁদের সার্টিফিকেট ও ব্ল্যাংক চেক নিয়ে আসতে বলা হয়। প্রথমে তাঁরা শাহবাগে আসেন। পরে তাঁদের মহাখালী আসতে বলা হয়। আরও কয়েক জায়গায় এই চক্রের লোকজন ছিল। রাত ১২টা থেকে ২টার মধ্যে প্রশ্ন দেওয়া হবে—এমনটা জানানো হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করে পুলিশ।

মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা অনেক দিন তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে এমন চক্রগুলোকে নজরদারির মধ্যে রেখেছিলাম। এই চক্র এর আগে জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া প্রশ্ন সরবরাহ করেছে। তারা মূলত একটা সাজেশন তৈরি করত। সেটাকে আসল প্রশ্ন বলে বিক্রি করত। অনেক সময় কিছু কিছু প্রশ্ন মিলে যেত। তবে কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। অভিভাবকদের সতর্ক হওয়া উচিত। এসব অন্যায় থেকে সন্তানদের দূরে রাখা উচিত।’