চট্টগ্রামে বেওয়ারিশ হিসেবে দুই 'জঙ্গির' লাশ দাফনের প্রস্তুতি

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জঙ্গি আস্তানায় র‍্যাবের অভিযানের সময় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত একতলা ঘর। গতকাল সোনাপাহাড় এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জঙ্গি আস্তানায় র‍্যাবের অভিযানের সময় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত একতলা ঘর। গতকাল সোনাপাহাড় এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর ছিন্নভিন্ন দুই ‘জঙ্গির’ পরিচয় শনাক্ত হয়নি। লাশ দুটি বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামকে দাফনের জন্য দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লাশ দুটির স্বজন দাবি করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে কেউ আসেননি।

এ দিকে র‍্যাবের সঙ্গে গোলাগুলি, অস্ত্র, বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অজ্ঞাতপরিচয় চার জঙ্গির বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার রাতে মামলা করেছে র‍্যাব।

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত উপজেলার উত্তর সোনা পাহাড় এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র‍্যাব। সেখান থেকে একটি একে ২২ রাইফেল, তিনটি পিস্তল, পাঁচটি গ্রেনেড ও শক্তিশালী চারটি বোমা আইআইডি (ইম্প্রভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) উদ্ধার করা হয়। বিস্ফোরণের পর পাওয়া যায় দুটি ছিন্নভিন্ন লাশ। দুজনেই পুরুষ। বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছর হতে পারে। পরে বাড়িটির সামনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের জানান, অস্ত্রগুলোর সঙ্গে গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের মিল রয়েছে। চট্টগ্রাম আদালত ভবনে হামলার পরিকল্পনা করতে জেএমবির সক্রিয় সদস্যরা বাড়িটিতে অবস্থান করেছিলেন। অভিযান শুরুর পর বাড়িটির মালিক মাজহার চৌধুরী ও বাড়িটির দেখাশোনাকারী মো. হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায় র‍্যাব।

আজ দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, বাড়িটির সামনে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পাহারায় রয়েছেন। দরজায় তালা দেওয়া। বাড়িটির সঙ্গে লাগোয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ বাড়িটির সামনে দিয়ে যাতায়াত করেননি। তারা মহাসড়কের পশ্চিম পাশ দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে এলাকার লোকজন কিছুটা ভয়ে রয়েছেন। আবার কখন কী হয়ে যায়। উত্তর সোনা পাহাড় এলাকার বাসিন্দা কৃষক আবুল হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো ভয়ে আছি।’

র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, র‍্যাবের সঙ্গে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনায় শুক্রবার রাতেই র‍্যাবের ফেনী ক্যাম্পের উপসহকারী পরিচালক মো. আজাদ বাদী হয়ে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করা হয়েছে। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। লাশ দুটির ডিএনএ নমুনা নিয়েছে ক্রাইম সিন ইউনিট। পরবর্তীতে লাশের স্বজন দাবিদার কেউ আসলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।

জোরারগঞ্জ থানার পরিদর্শক তদন্ত মোজাম্মেল হক র‍্যাবের করা মামলাটি তদন্ত করছেন। তিনি বলেন, পলাতক জঙ্গিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, কোনো ওয়ারিশ না আসায় লাশ দুটি আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছে। আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক সেলিম নাছের প্রথম আলোকে বলেন, আজ রাতে নগরের চৈতন্য গলি কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দুটি দাফনের প্রস্তুতি চলছে।