রাখাইনে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ এখনো হয়নি

মিয়ানমারের বাহিনীর সহিংস অভিযানের মুখে লাখো রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ছবি: রয়টার্স
মিয়ানমারের বাহিনীর সহিংস অভিযানের মুখে লাখো রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ছবি: রয়টার্স
>
  • প্রথমবার রাখাইনের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেছে জাতিসংঘ
  • রাখাইনের জনগোষ্ঠীর চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা
  • জনগোষ্ঠীর চাহিদা ও স্বল্পমেয়াদি অগ্রাধিকার মূল্যায়ন

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রথমবারের মতো মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে জাতিসংঘ দেখেছে, সেখানে এখনো মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজনের চলাফেরা সীমিত। জীবিকা ও মৌলিক সেবা পাওয়ার অধিকারও সংকুচিত। এমন অবস্থায় রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরত পাঠানোর উপযোগী পরিবেশ রাখাইনে এখনো হয়নি বলে মনে করছে জাতিসংঘ।

গত মাসে রাখাইনের ২৩টি গ্রাম ও গ্রামের তিনটি স্তরে ওই মূল্যায়ন চালিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। গত শনিবার এটি প্রকাশ করা হয়েছে।

সীমিত এবং নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হলেও এটি যে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রথম পদক্ষেপ, রাখাইনের প্রাথমিক মূল্যায়নে ইউএনএইচসিআর এবং ইউএনডিপি তা উল্লেখ করেছে। মাঠপর্যায়ের ওই সফরে ইউএনএইচসিআর এবং ইউএনডিপি সেখানে বসবাসরত জনগোষ্ঠী কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে আছে, সে সম্পর্কে প্রাথমিক একটা ধারণা পেয়েছে। জাতিসংঘের কর্মীরা সেখানকার জনগোষ্ঠীর তাৎক্ষণিক চাহিদা এবং স্বল্পমেয়াদি অগ্রাধিকারগুলো মূল্যায়ন করেছেন।

অনেকেই বলেছেন, চলাফেরায় বিধিনিষেধের ফলে জীবিকা ও মৌলিক সেবা পাওয়ার সুযোগ ক্রমবর্ধমান হারে কমছে। বিশেষ করে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজনকে অবাধে চলাফেরা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ভয় আর অবিশ্বাসের কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য মৌলিক সেবার ওপর প্রভাব পড়ছে। এতে করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়ছে, যা আস্থা স্থাপন আর সামাজিক একীভূতকরণের সম্ভাবনায় বাধা সৃষ্টি করছে।

রাখাইনে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন জাতিসংঘের মূল্যায়নকারী দলকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনায় এবং তাদের কাজে যুক্ত হতে যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছেন। সেখানে বিদ্বেষের কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি।

মংডু, বুচিডং ও রাথেডংয়ে ভ্রমণের অনুমতি পাওয়ায় ওই এলাকাগুলোতে ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপি দ্বিতীয় ধাপে মূল্যায়নের কাজ শুরু করেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সই করা সমঝোতা স্মারকের আওতায় রাখাইনের আরও ব্যাপক এলাকায় নির্বিঘ্নে চলাফেরার সুযোগ প্রত্যাশা করে জাতিসংঘের এই দুই সংস্থা।

জাতিসংঘ বলেছে, রাখাইন সংকটের একটি সমন্বিত ও টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকারকে সমর্থনের জন্য সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপি।

যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনার মধ্যমেয়াদি মূল্যায়ন

এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ৯৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনায় (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান-জেআরপি) বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা মিলিয়ে ১০১টি অংশীদার রোহিঙ্গাদের জন্য এ সহায়তার অঙ্গীকার করেছে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তর, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) যৌথভাবে মধ্যমেয়াদি ওই মূল্যায়ন করেছে।