ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পৃথিবীর জঘন্যতম আইনের একটি: বিএনপি

রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির নেতারা বলেছেন, তাঁরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানেন না। আইনটিকে পৃথিবীর জঘন্যতম আইনের একটি বলছে দলটি।

আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিএনপি আয়োজিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় দলটির নেতারা এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভার সভাপতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানি না। এ আইন পাস করার মাধ্যমে সরকার সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’ তিনি বলেন, গত ১০ বছরে আ.লীগ এই দেশের মানুষের ওপর একটার পর একটা আইন চাপিয়ে দিয়েছে। একটা পাহাড়সমান বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে।

ফখরুল বলেন, ‘হতাশার কোনো কারণ নেই। হতাশ হবেন না। আমি সব সময় আশার আলো দেখতে পাই। আমাদের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত মুক্তির সংগ্রাম চালিয়ে যাব। আমরা সে জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ শুরু করেছি। ঐক্যবদ্ধ করার আগেই তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে।’

ডিজিটাল আইন সম্পর্কে ফখরুল বলেন, ‘আমরা এ আইন মানি না। আইন যেখানে পাস হয় সেই পার্লামেন্টেরই কোনো বৈধতা নেই। এই পার্লামেন্ট জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব করে না। এই আইন নিয়ে সরকার আলোচনাও করেনি। এই সরকার তো প্রতারক সরকার। কয়েক দিন আগেই সম্পাদকদের সঙ্গে বসে কথা দিলেন আলোচনা করে সংশোধন করব। তা করা হলো না।’

সরকার কথায় কথায় মামলা দিচ্ছে উল্লেখ করে ফখরুল আরও বলেন, ‘কোনো কথা নেই সাড়ে চার হাজার মামলা, পাঁচ লাখ আসামি। এই সরকার আসার পর আমাদের আসামি সংখ্যা ২৫ লাখ আর মামলার সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।’

সরকারকে ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, ‘এখনো সময় আছে উপলব্ধি করার, আপনারা আপনাদের রক্ষাকর্তা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করুন। তিনি পারেন দেশকে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে। এ ছাড়া কোনো উপায় নেই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াই এই অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে পারবেন। তাঁকে মুক্ত করুন। ক্ষমতা কারোরই চিরস্থায়ী নয়। কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে একটি সংসদ নির্বাচন  হয়, জনগণ তাদের মতামত দিতে পারবে, জনগণের সরকার গঠন করা যায়, সে বিষয়ে এগিয়ে আসুন।’ তিনি বলেন, খারাপ সময় যায় কিন্তু চিরদিনের জন্য খারাপ সময় যায় না। জনগণকে জিম্মি করে, বন্দী করে তাদের বুকে-মাথায় বন্দুক রেখে দিয়ে দেশ শাসন কিছুদিনের জন্য করা যায়, সারা সময়ের জন্য করা যায় না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশ স্বাধীনের পর যত কালো আইন হয়েছে, ডিজিটাল আইন তার মধ্যে অন্যতম। এখন দেশে অলিখিত বাকশাল চলছে। এই বাকশাল পাকাপোক্ত করতে এই আইন করা হয়েছে। এ আইন করার মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার। রাজতন্ত্রেও এমন আইন আছে বলে মনে হয় না।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে বর্তমান অবস্থায় কথা বলাটা বিপদ। যে ডিজিটাল আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, তা পৃথিবীর জঘন্যতম আইনগুলোর একটি। সত্য কথা বলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, দিনকে দিন সত্য কথা বলতে শিখতে হবে। না হলে সত্য প্রকাশ হবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘শুনলাম, আইনে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেছেন। সরকারের অপরাধ যাতে প্রকাশ করা না হয়, তাই এ আইন পাস করা হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এটি গণতান্ত্রিক আইন হয়নি।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, রাশিয়া, তুরস্ক ও ভিয়েতনামের কূটনীতিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

আইনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মামুন আহমেদ, বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহম্মেদ, ইনডিপেনডেন্টে টেলিভিশনের চিফ নিউজ এডিটর আশিষ ঘোষ সৈকত, ডিইউজের (একাংশ) সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, বিএফইউজে (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, হলিডে পত্রিকার সম্পাদক সৈয়দ কামাল উদ্দিন আহমেদ। মতবিনিময় সভায় বিশেষ নিবন্ধ পড়েন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ।