গুজব ঠেকাতে অনলাইনে নজরদারি আরও বাড়বে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি
>
  • সামাজিক মাধ্যমে গুজব ঠেকাতে ‘গুজব শনাক্তকরণ সেল’
  • তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নয় সদস্যের সেল
  • সেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে
  • পুলিশও সামাজিক মাধ্যমকে কঠোর নজরদারিতে আনতে তৎপর
  • পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে ‘গুজব শনাক্তকরণ সেল’ কাজ করবে
  • সেলের কাজের ধরন ও সমন্বয় ঠিক করতে আজ সভা

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুজব ঠেকাতে ‘গুজব শনাক্তকরণ সেল’ গঠন করেছে সরকার। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নয় সদস্যের এই সেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে। তবে এই সেল কীভাবে কাজ করবে এবং কাদের সহায়তা নিয়ে কাজটি করা হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।

আবার পুলিশও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে কাজ করছে। পুলিশের প্রায় ১০০ ইউনিটকে এই কাজে যুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, অনলাইন মাধ্যমে ‘জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি’ এমন যেকোনো বিষয়কে নজরদারির আওতায় আনতে কাজ চলছে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করেই ‘গুজব শনাক্তকরণ সেল’ কাজ করবে। এই সেলের কাজের ধরন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কীভাবে সমন্বয় করে সেল কাজ করবে, তা ঠিক করতে ৯ অক্টোবর (আজ) তথ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভা ডাকা হয়েছে। সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকবেন।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম প্রথম আলোকে বলেন, অসত্য, মিথ্যা, বানোয়াট বা অতিরঞ্জিত কোনো বিষয় যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে, কোনো আন্দোলন বা নাশকতাকে উসকে দেয় বা রাষ্ট্রকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়, এমন বিষয় গুজব দমন সেল চিহ্নিত করবে। গুজব চিহ্নিত করার পর তা গণমাধ্যম এবং বিটিআরসিকে জানানো হবে। তিনি বলেন, সামাজিক মাধ্যমগুলোতে আসা কোনো তথ্য গুজব কি না, শুধু সেটি চিহ্নিত করবে সেল। কোনো ‘পুলিশিং’ করবে না তারা।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর গুজব বিষয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে তথ্য মন্ত্রণালয়। ওই সভায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানিয়েছিলেন, ইন্টারনেটে ‘অপপ্রচার’ বন্ধে ‘গুজব শনাক্তকরণ ও নিরসন কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরপর গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তৃতায় এ ধরনের সেল গঠনে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

গুজব ঠেকানোর বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘সাইবার ক্রাইম প্রিভেনশন’ কমিটির নেতৃত্বে পুলিশ সদর দপ্তরের লিগ্যাল ইন্টারসেপশন সেল, অপরাধ তদন্ত বিভাগ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, র‍্যাব, নৌপুলিশ, মহানগর পুলিশ, রেঞ্জ পুলিশ ও প্রতিটি জেলার পুলিশ সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারির কাজ করবে। এ জন্য বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম, এসবি ও সিআইডিকে।

পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ঠেকাতে ২৪০ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিছু সফটওয়্যার কেনা নিয়ে আলোচনাও চলছে। ফেসবুকসহ অন্য কোনো সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে কেউ ‘জনশান্তি’ বা ‘জনশৃঙ্খলা’ নষ্ট হয় এমন কোনো শব্দ ব্যবহার করলে ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

ঠিক কোন পোস্টগুলোকে জনশান্তি বা শৃঙ্খলা পরিপন্থী বলে গণ্য করা হবে, পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক ও অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক পর্যায়ের অন্তত তিনজন কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা সুস্পষ্ট কোনো সংজ্ঞা দিতে পারেননি। মূলধারার সংবাদপত্রগুলোকে সংবাদ প্রকাশে বাধা না দিলে গুজব কমবে এমনটি মনে করেন কি না, জানতে চাইলে একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অনেকেই বিশ্বাস করেন, সংবাদমাধ্যমকে ঠিকমতো চলতে দিলে গুজব বা অপপ্রচারে মানুষ কান দেবে না। তবে কেউ এ কথাটি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জানানোর সাহস পাচ্ছেন না।