নির্বাচনের আগে প্রয়োজনে প্রতিদিন একনেক হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসির সম্মেলনকক্ষে একনেকের সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। ছবি: পিআইডি
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসির সম্মেলনকক্ষে একনেকের সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। ছবি: পিআইডি

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, নির্বাচনের আগে প্রয়োজনে প্রতিদিন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুষ্ঠিত হবে। এমনকি তফসিল ঘোষণার পরও একনেক সভা হবে।

আজ মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। শেরেবাংলা নগরে এনইসির সম্মেলনকক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।

সংসদ নির্বাচনের  আগে কেন এত প্রকল্প পাস করা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে যদি প্রয়োজন হয় প্রতিদিন বৈঠক করব। আগামী বৃহস্পতিবারও আরেকটি একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সময় বেসরকারি খাত খুঁজে পাওয়া যাবে না, কম আসবে। তারা ভাবে, ২-৩ মাস দেখি। সেটা সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে পুষিয়ে নেওয়া হবে। চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সোয়া ৮ শতাংশ হবে বলে জানান মন্ত্রী।

নির্বাচনকালীন সরকার শুধু নিয়মমাফিক কাজ করবে—এমন প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে মন্ত্রী বলেন, কোনটি রুটিন কাজ নয়। সংবিধানকে কী লেখা আছে, মঙ্গলবার ছাড়া একনেক সভা করা যাবে না। যখন বেসরকারি খাত পিছিয়ে যাবে, তখন সরকারি খাতই অর্থনীতির চালক আসনে বসে।

এদিকে আজকের একনেক সভায় সব মিলিয়ে ২০টি প্রকল্প পাস হয়েছে। এসব প্রকল্পে খরচ হবে ৩২ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশজ উৎস থেকে দেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা দেবে ১১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা এবং বিদেশি সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো, ১০ হাজার ৪৬১ কোটি টাকার ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার; ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন; ১০৪ কোটি টাকার জরুরি সহায়তা প্রকল্প-বিআরইবি অংশ (কক্সবাজারে আশ্রয় গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য বিদ্যুতায়ন); ৩ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকার পল্লি যোগাযোগ উন্নয়ন; ২৯৭ কোটি টাকার বাংলাদেশ ইমারজেন্সি অ্যাসিসটেন্স; ১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কিল্লা নির্মাণ; ৩০৫ কোটি টাকার কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলাধীন নির্মিতব্য মিঠামইন সেনা স্থাপনার ভূমি সমতল উঁচু করা, ঢেউ প্রতিরোধ ও তীর সংরক্ষণ; ৩৯৯ কোটি টাকার চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলা এবং রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী ও ইছামতী নদী এবং শিলক খালসহ অন্য খালের তীরের ভাঙন হতে রক্ষা; ১৬৯ কোটি টাকার রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও রংপুর সদর উপজেলায় তিস্তা নদীর ডান তীর ভাঙন থেকে রক্ষা; ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকার ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট; ৮৮৩ কোটি টাকার গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট-বিরামপুর-ফুলবাড়ী-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ককে যথাযথ মানে উন্নীত করা; ৪৫৮ কোটি টাকার কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক উন্নয়ন; ৬০৭ কোটি টাকার খুলনা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন; ৪১৯ কোটি টাকার দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২৫টি উপজেলা সদরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন; ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন; ৮৮৩ কোটি টাকার সিরাজগঞ্জ জেলার শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন; ৪২৮ কোটি টাকার বিদ্যমান ১২টি ক্যাডেট কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণ; ৭৭০ কোটি টাকার পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন (কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলা); ৫৯১ কোটি টাকার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর গুদারাঘাটের নিকট শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর কদমরসুল সেতু নির্মাণ এবং ১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকার চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সড়ক ও বেড়িবাঁধ প্রতিরক্ষা এবং নিষ্কাশন প্রকল্প।