আপনারা ষড়যন্ত্রের শিকার: মাহী; আমার আরও ভাবা উচিত ছিল: মান্না

মাহমুদুর রহমান মান্না ও মাহী বি চৌধুরী
মাহমুদুর রহমান মান্না ও মাহী বি চৌধুরী

জাতীয় প্রেসক্লাবে শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। শুরুর দিকে এই ঐক্যের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ড. কামাল হোসেন ও ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী)। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে বি. চৌধুরীকে দেখা যায়নি।

তবে বিকল্পধারার প্রধান বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জোট যুক্তফ্রন্টের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। মান্নাই সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা পাঠ করেন। পরে শনিবারই সংবাদ সম্মেলন করে বি. চৌধুরী জানালেন, ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁদের বাদ দিয়েই ঐক্যফ্রন্ট গঠন হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও যুক্তফ্রন্টের নেতা মাহী বি. চৌধুরীর সঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্নার মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে, যা ইতিমধ্যে ফাঁস হয়ে গেছে। সেখানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মাহী বি. চৌধুরী।

যোগাযোগ করা হলে মাহী বি. চৌধুরী প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন, ফাঁস হওয়া কথোপকথনটি মাহমুদুর রহমান মান্না ও তাঁর। 

ফোনালাপের বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আমার ভয়েস, মাহীর ভয়েস, ঠিক আছে। কিন্তু খেয়াল করে দেখেন, আমি দেখলাম, ওই পক্ষের কথা খুব শোনা যাচ্ছে। আমরাটা তেমন ভালো করে শোনা যাচ্ছে না। এটা অনেক কিছু ব্যাখ্যা করে।’ 

পাঠকের জন্য সেই ফোনালাপ তুলে ধরা হলো:

মাহী বি. চৌধুরী: মান্না ভাই, আপনি আব্বার সঙ্গে কথা বলে ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন?

মাহমুদুর রহমান মান্না: না না, এই মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা হয়েছে। আমার আরও ভালো করে ভাবা উচিত ছিল। রব ভাই কথা বলেছেন স্যারের সঙ্গে। স্যার বলেছেন, হ্যাঁ, আমি এটা চিন্তা করছি, আধা ঘণ্টার মধ্যেই জানাচ্ছি। আমি ভেবেছি উনি আসবেন।

মাহী: না না। আব্বা আমার পাশে বসে রব চাচার সঙ্গে কথা বলেছেন। উনি যদি এই কথাটা বলে থাকেন, তা সত্যি নয়। আর আব্বা তো নিজেই আপনার সঙ্গে কথা বলেছে, মান্না ভাই।

মান্না: আমার সঙ্গে কথা বলেছেন কি? কথা তো সব ঠিকই আছে। যেভাবে যেভাবে বলবার ব্যাপার সেভাবে আলাপ হয়েছে। আমি অনেস্টলি বলি, আজকের সামগ্রিক বিষয়ের ওপর অনেক কথা আছে, সামনা–সামনি বলব। ফোনে সব বলতে পারব না। কিন্তু একটা সিচুয়েশন হয়েছে, সেটা আমি অ্যাভয়েড করতে পারিনি। নিজে কথাবার্তা বলার পরে এগ্রি হয়েছি। কিন্তু তখনো ঘোষণাপত্র পড়ার কথা হয় নাই। সেটা হয়েছে পরে। আমি তো প্রথমে বলেছি, যাবই না।

মাহী: কিন্তু সকালে মঈনুল হোসেন সাহেব কামাল হোসেন সাহেবকে সরিয়ে নিয়ে গেলেন উনার বাসা থেকে। চিন্তাটা আগেই ছিল মওদুদ সাহেবের যে বি. চৌধুরী ও কামাল হোসেনকে একলা বসতে দেওয়া যাবে না। বি. চৌধুরীকে সম্পূর্ণরূপে অপমান করে দেওয়া, এই যে একটা পরিকল্পনা, এই একটা চক্রের মধ্যে তো আপনারা পড়ে গেলেন. মান্না ভাই!

মান্না: না না। এই চক্রের মধ্যে পড়ব কেন। আপনাদের ব্যাপারটাও আমার একটু বোঝা দরকার। আচ্ছা, আপনি আমাকে কেন দোষারোপ করছেন মিছিমিছি? আমি কী বেইমানি করলাম?

মাহী: না না। আমি এই ওয়ার্ডটাই উচ্চারণ করিনি। আমি বলেছি, আব্বা যখন নিজে কথা বলেছে। এরপর আপনি বলেছেন—ঠিক আছে, আপনি আমাদের প্রেস কনফারেন্সে থাকবেন না, উনাদের প্রেস কনফারেন্সও থাকবেন না। আমরা সেটা আশা করেছিলাম। তাই আপনি যখন ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন, তখন আব্বা লিটারেলি শকড। বলেছেন, ‘মান্নার জন্য কামাল হোসেনের সঙ্গে আমি ফাইট করেছি। সেখানে কামাল হোসেন হয়ে গেল মান্নার কাছের লোক। আমাকে অপমান করল। আর মান্না সেখানে চলে গেল ঘোষণাপত্র পাঠ করতে?’

মান্না: এটা আপনি খুব রাইট কথা বলেছেন। আমাকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে, পুশ করে...দ্যাট টাইম ইউর ফাদার সেভড মি। সেটা তো আমি ভুলছি না। তার মানে কি গ্রেটার ইউনিটি চিন্তার বাইরে চলে গেছে, তা তো না।

মাহী: কার সঙ্গে গ্রেটার ইউনিটি, যে লোক ভদ্রতা জানে না, তার সঙ্গে?

মান্না: পলিটিকসে এ রকম হয়।

মাহী: এ রকম পলিটিকস আমরা করি না। রব চাচা, আপনারা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গেলেন, আমরা আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলাম।

মান্না: বেঁচে গেলাম মানে কী? মানে আপনারা ঐক্য থেকে বেরিয়ে গেলেন?

মাহী: আমরা বেরিয়ে যাইনি, আমাদের বের করে দিলেন আপনারা। আপনারা মিটিং করলেন, আমাদের ডাকলেনই না। আপনারা ঘোষণা দেবেন, বি. চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন? আপনি আমাকে বলেন, বি. চৌধুরী সাহেব কামাল হোসেনের বাসায় যাবেন। অথচ উনি বাসায় ছিলেনই না। একবার ফোন করে দুঃখ প্রকাশ পর্যন্ত করেননি। যৌথ ঘোষণা দেবেন, আমাদের জানিয়েছেন? আমরা কিন্তু ঐক্য থেকে বেরিয়ে আসিনি। ঐক্য কে চায় না, তা জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে।

মান্না: ঐক্য যদি চান আপনারা আসেন, তাহলে কী করবেন?

মাহী: ঐক্য তো চায় না, আজকে তো বলেই দিলেন।

মান্না: প্রেস কনফারেন্সে আপনাদের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে আপনারা আসছেন।

মাহী: সেটা তো জাতির সঙ্গে মিথ্যা কথা বলা। ওনার তো প্রেস কনফারেন্সে আসার কথা না। উনাকে তো কেউ প্রেস কনফারেন্সে আসার কথা বলে না।

মান্না: প্রেস কনফারেন্সে পরে এটাও বলা হয়েছে, যেকোনো কারণেই হোক, ভুলের কারণেই হোক, উনি এখন এখানে নাই। কিন্তু আমরা তাঁকে ঐক্যের মধ্যেই ধরে আছি। উনি আমাদের সঙ্গে আছেন।

মাহী: কাদের সঙ্গে? কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আপনারা ঐক্য করছেন। ড. কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন। ওনার নেতৃত্বে জামায়াতের সঙ্গে গোপন আঁতাত হবে, এগুলোর সঙ্গে আমরা থাকতে চাই না, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন। বাট প্রশ্ন তো সেটা না। এই বিষয়গুলো আপনারা জাতির সামনে পরিষ্কার করেই বলতেন যে ওনাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। ওনাকে না বলে আমরা চুরি করে মিটিং করছি। এগুলো বলেন নাই কেন? কামাল হোসেন উনার বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে অফিসে গিয়ে মিটিং করে, বি. চৌধুরীকে বাদ দিয়ে আমরা একটা ঐক্য করতে চাই। জামায়াতের সঙ্গে গোপনে গোপনে আমরা ঐক্য করতে চাই। এসব বলতেন।

মান্না: আপনি এভাবে বলছেন কেন?

মাহী: যা করছেন তা–ই বলতেন।

মান্না: ভালো কাজ হয়নি, সেটা আমিও মানছি। তার মানে এই না যে আমরা রেগে গিয়ে বলব, আমরা অন্যায় কাজ করেছি। তাহলে প্রেস কনফারেন্সে আসছেন কেন? ওইটা তো হয় না। যেহেতু ঐক্যটা করতে চাই, তাই করেছি। হ্যাঁ, একটা কথা হলো, একটা বিভ্রান্তির মধ্যেই ছিলাম।

মাহী: মান্না ভাই, আমি আপনাকে আজকে আল্লাহর কসম একটা কথা বলি, আপনাকে পছন্দ করি বলেই বলছি। আপনি হান্ড্রেড পার্সেন্ট আন্তরিক ঐক্যের ব্যাপারে। আমিও হান্ড্রেড পার্সেন্ট ঐক্যের ব্যাপারে আন্তরিক। কিন্তু ঐক্যের নাম দিয়ে এখানে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আপনাকে দিয়ে ঘোষণাপত্র পাঠ করানো হচ্ছে, আমাকেও এখানে ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। আজকের এই কথাটা শুধু মনে রাখবেন। আর কিছু বলব না।

মান্না: চিন্তা করব, আরও কথা বলব, সামনাসামনি।

মাহী: জি। আমার মনে হয় একটা চক্রান্তের মধ্যে আপনারা ভিকটিম হয়ে যাচ্ছেন মান্না ভাই। আমার মনে বিশ্বাস থেকে বললাম, ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখানে আমাদের জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। আমি আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলাম। আপনাকে দিয়ে ঘোষণাপত্র পাঠ করানো হলো।

মান্না: না, আপনি যেভাবে মনে করছেন আমি সেভাবে মনে করছি না। আজকের ঘটনার জন্য আমি মর্মাহত।

মাহী: আপনি মনে করছেন আজকের ঘটনাটা এমনি এমনি, ভুলে ভুলে হয়ে গেছে? মনে হয় এর বাইরে জাতীয়-আন্তর্জাতিক চক্রান্ত নাই?

মান্না: এমনি হয়ে গেছে ভাবছি না, আবার এত বড় জিনিসও ভাবছি না।

মাহী: অনেক বড় জিনিস হয়েছে। একটুখানি নজর দিয়ে দেখার চেষ্টা করেন, কারা কারা জড়িত। কারা কারা কামাল হোসেন ও বি চৌধুরীকে একসাথে বসতে দিল না, কারা আপনাকে দিয়ে ঘোষণাপত্র পাঠ করাল। আপনারাই বিবেচনা করে দেখেন, আপনারা কিসের মধ্যে ঢুকছেন, আমি কিছু বলব না।

মান্না: আচ্ছা, আলাপ করব।

মাহী: জি, ইনশা আল্লাহ।