চার দিন আগে রবিউলকে আটক করার অভিযোগ। পুলিশ বলছে, গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়

ছাত্রদলের নেতা রবিউলকে আজ রোববার আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাঁকে চার দিন আগে আটক করার অভিযোগ উঠলেও পুলিশ বলছে, গতকাল শনিবার রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছবি: আসাদুজ্জামান
ছাত্রদলের নেতা রবিউলকে আজ রোববার আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাঁকে চার দিন আগে আটক করার অভিযোগ উঠলেও পুলিশ বলছে, গতকাল শনিবার রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছবি: আসাদুজ্জামান

ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের (পূর্ব) সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউলের পরনে ছিল সাদা শার্ট। ডান পায়ের হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট তোলা। হাঁটুতে ব্যান্ডেজ। তাঁর আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদিন মেজবাহ ঢাকার আদালতের কাছে অভিযোগ করেন, গত বৃহস্পতিবার রবিউলকে সাদাপোশাক পরা পুলিশ হাইকোর্টের সামনে থেকে আটক করে। এরপর তারা রবিউলের ওপর নির্যাতন চালায়।

আজ রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত শুনানি নিয়ে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রদলের নেতা রবিউল ইসলাম নয়নকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশকে অনুমতি দিয়েছেন।

বিএনপির  যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ সংবাদ সম্মেলনে জানান, রবিউলকে হাইকোর্টর সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রিজভী ছাত্রদলের নেতা রবিউল ইসলামকে জনসমক্ষে আনার দাবি জানান। অবশ্য পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, রবিউলকে গতকাল শনিবার অস্ত্রসহ শাহজাহানপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রবিউল ইসলামের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদিন মেজবাহ আদালতকে বলেন, রবিউলকে পুলিশ নির্যাতন করে। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবশ্য ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগ আদালতকে জানিয়েছে, রবিউল ইসলামকে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। রবিউলের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে শাহজাহানপুর থানায় মামলা হয়েছে।

ছাত্রদলের নেতা রবিউলকে আজ বিকেলে ঢাকার আদালতে তুলে তাঁকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড ট্যাকটিক্যাল সুইপিং টিমের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীনুল ইসলাম এক প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে বলেন, রবিউল ইসলামসহ তাঁর ১৪ থেকে ১৫ জন সহযোগী শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির মৈত্রী সংঘ মাঠের উত্তর পূর্ব-কোনায় একান্ত গোপন বৈঠকে মিলিত হন। ঢাকা মহানগর এলাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালানোর জন্য সেখানে তাঁরা একত্র হন। রাত আটটার দিকে এমন গোপন সংবাদ পাওয়ার পর অভিযান চালিয়ে রবিউলকে আটক করা হয়। অপর আসামিরা পালিয়ে যান। এ সময় রবিউল ইসলামের দেহ তল্লাশি করে একটি পিস্তল পাওয়া যায়। গুলি পাওয়া গেছে ৫টি।

এ ব্যাপারে রবিউল ইসলামের আইনজীবী জয়নাল আবেদিন আদালতকে বলেন, হাইকোর্ট থেকে ধরে নিয়ে পুলিশ এখন বলছে, রবিউলের কাছে অস্ত্র পাওয়া গেছে। বাস্তবে রবিউলের বিরুদ্ধে এ মামলা সাজানো।
রিমান্ড আবেদনে পুলিশ আদালতকে বলেছে, আসামি রবিউলের দেখানো মতে শাহজাহানপুরের মৈত্রী সংঘ মাঠের উত্তর-পূর্ব কোনা থেকে অবিস্ফোরিত ৫টি ককটেল জব্দ করা হয়েছে। রবিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগর ও আশপাশের এলাকায় বিশৃঙ্খলা এবং বড় ধরনের নাশকতা করার জন্য আসামিরা একত্র হয়েছিল।
রবিউলের কাছের অস্ত্র ও বিস্ফোরকের উৎসের সন্ধানে এবং অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি বলে আদালতকে জানিয়েছে পুলিশ।

জয়নাল আবেদিন আদালতকে বলেন, রবিউলকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করার কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। রবিউল গুরুতর অসুস্থ, এখন তাঁর চিকিৎসা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হওয়া জরুরি।

আদালতে দেখা যায়, রবিউলের ডান পায়ের হাঁটুর নিচে ব্যান্ডেজ করা। হাজতখানার পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে আদালতে তোলে। দাঁড়াতে না পারার কারণে রবিউলকে আদালতের এজলাস কক্ষের বেঞ্চে বসানো হয়। এরপর রবিউল তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন। প্রায় ২০ মিনিট সেখানে তিনি অবস্থান করেন।

রবিউলের আইনজীবী আদালতকে বলেন, চার দিন আগে রবিউলকে ধরে নিয়ে পুলিশ এখন মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিয়েছে। এখন আবার রিমান্ডে নিতে চাচ্ছে।