মণ্ডপ আজ মুখর হবে ঢাকের বোলে

>
  • এবার ১০টি মণ্ডপে পূজা বসছে। 
  • শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির ব্যস্ততা ছিল গতকাল।
  • পূজার জন্য পদ্ম ফুল কিনেছেন অনেকেই।
পূজার জন্য পদ্ম ফুল কিনছেন এক ভক্ত। গতকাল শাঁখারীবাজারে।  ছবি: জয়দেব সরকার
পূজার জন্য পদ্ম ফুল কিনছেন এক ভক্ত। গতকাল শাঁখারীবাজারে। ছবি: জয়দেব সরকার

গলিতে পা দিতেই কানে আসে থেমে থেমে ঢাকের বোল আর চণ্ডীপাঠের সুর। দুই পাশের দোকানগুলোও সরগরম ক্রেতাদের ভিড়ে। কিছু দূর পরপরই মণ্ডপ। সেখানে জোরেশোরে চলছে পূজার শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি। কেউ ব্যস্ত মণ্ডপের সাজসজ্জা নিয়ে, কেউবা ঠিক করছেন আলোকসজ্জার সরঞ্জাম।

গতকাল রোববার দুপুরে এই চিত্র পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারের। সেখানে এবার ১০টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। শাঁখারীবাজার নতুন কুঁড়ি পূজা কমিটির সহসম্পাদক অরুণ কুমার দত্ত বলেন, পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুদের প্রধান উৎসব। সময়ের পরিক্রমায় দুর্গাপূজা এখন সর্বজনীন। আজ সোমবার সকালে বেলবরণ পূজার মধ্যে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আর সন্ধ্যায় আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে পিত্রালয়ে বরণ করা হবে। ঢাকের বোলে মুখর হয়ে উঠবে পূজামণ্ডপ।

পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, সূত্রাপুর, লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার ঘুরে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সবাই। কিছু দূর পরপরই মণ্ডপসজ্জার কাজ চলছে। প্রতিমা তোলা হয়েছে কোনো কোনো মণ্ডপে। কিন্তু তখনো আসনে বসানো হয়নি। আজ দুপুরের মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান অরুণ কুমার।

পূজার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বেচাকেনাও চলছে জমজমাট। ফর্দের তালিকাও ছোট নয়—বেলপাতা, ধান-দূর্বা ও পদ্মফুল থেকে শাড়ি, চুড়ি, টিপ, সিঁদুরও রয়েছে। শাঁখারীবাজারের গলিজুড়ে একটু পরে পরে পদ্মফুলের পসরা। অনেকেই কিনছেন ১০৮টি করে পদ্ম।

আজিমপুর থেকে আসা সীমা রানী দাস ৩০০ টাকায় ১০৮টি পদ্মফুল কেনেন। তিনি বলেন, অষ্টমীর দিন পদ্ম দরকার। তাই অন্যান্য কেনাকাটার পাশাপাশি তিনি পদ্ম কিনেছেন। কেউ কেউ বেলবরণের সরঞ্জাম, সোলার ঝরা, আবিরও কিনছেন।

গলিটি ঘুরে দেখা যায়, পূজার এ সময়ে শুধু পদ্মফুল বিক্রি করতে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, যশোর, সিলেট, মৌলভীবাজার থেকে অনেক বিক্রেতা এসেছেন। আট হাজার পদ্ম নিয়ে হারিচ শেখ এসেছেন গোপালগঞ্জ থেকে। সন্ধ্যার মধ্যে বিক্রি শেষ করে রাতের গাড়িতে বাড়ি ফিরে যাবেন। ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় বিল থেকে ফুলগুলো তুলছেন তিনি। খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভ পাবেন বলে জানান হারিচসহ কয়েকজন মৌসুমি বিক্রেতা।

পূজাকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার থেকে কেনাবেচা জমেছে। ক্রেতাদের অনেকে শাড়ি কিনে ঢুঁ দিচ্ছেন গয়নার দোকানে। শেষে মিলিয়ে টিপও কিনছেন। এ জন্য দোকানদারেরাও বাড়তি আয়োজন রেখেছেন। তবে এ সময় মিষ্টির বেশ চাহিদা থাকে ঘরে ঘরে। অমূল্য মিষ্টান্ন ভান্ডারের ব্যবস্থাপক অলোক কুমার সাহা বলেন, লাড্ডু আর আমৃত্তির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বছরের অন্যান্য সময় এক পদের লাড্ডু রাখলেও পূজার সময় দোকানে ঘিয়ে ভাজাসহ তিন পদের লাড্ডু রাখা হয়।

স্থানীয় লোকজন বলেন, আজ ষষ্ঠীর রাত থেকেই পুরান ঢাকার রাতের আবহ বদলাতে শুরু করবে। ছোট ছোট গলির এই এলাকা নানান রঙের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। নানান বয়সী মানুষ দল বেঁধে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়াবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজল দাস বলেন, পূজার সময় রাত যত গভীর হয়, আর পুরান ঢাকা ততই জেগে ওঠে।

স্থানীয়দের মধ্যে সূত্রাপুর গৌতম মন্দির, নর্থব্রুক হল রোডের জমিদারবাড়ি, বাংলাবাজার বোবার স্কুলের পূজামণ্ডপ নিয়ে বাড়তি আগ্রহ রয়েছে।