ছেলেই নেই, এই টাকা দিয়েই বা কী হবে...

ফেসবুকে ছেলে পিয়াস রায়ের বিভিন্ন সময়ের ছবি দেখাচ্ছিলেন বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায়। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
ফেসবুকে ছেলে পিয়াস রায়ের বিভিন্ন সময়ের ছবি দেখাচ্ছিলেন বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায়। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সুখেন্দু বিকাশ রায় ফেসবুকে ছেলে পিয়াস রায়ের বিভিন্ন সময়ের ছবি দেখাচ্ছিলেন। ছেলে জাতীয় পর্যায়ে ২২ বার পুরস্কার পেয়েছেন। ‘ছেলে তো প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্য ছিল...ছেলে ভালো খেলত...।’ ছেলেকে নিয়ে বাবার গর্বের শেষ নেই। কিন্তু বাবার চোখে কোনো আনন্দ নেই, দুই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে। তিনি এসেছেন ছেলের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণের চেক নিতে।

সুখেন্দু বিকাশ রায় জানালেন, হাতের চেকটি খুলে দেখেননি। ছেলের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ কি আর টাকা দিয়ে হয়। ছেলেই নেই, এই টাকা দিয়েই বা কী হবে? জানালেন, ছেলের নামে এতিম, অসহায়দের জন্য একটি ট্রাস্ট চালু করবেন। সুখেন্দু রায়ের ছেলে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হন।

ছেলের কথা বলতে গিয়ে আবেগাল্পুত সুখেন্দু বিকাশ রায়। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
ছেলের কথা বলতে গিয়ে আবেগাল্পুত সুখেন্দু বিকাশ রায়। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

শুধু সুখেন্দু বিকাশ রায় নন, ওই দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মোট ছয় ব্যক্তির পরিবারের সদস্য এবং আহত দুই যাত্রী ক্ষতিপূরণের চেক নিতে হাজির হয়েছিলেন রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে। আজ বুধবার ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের বিমাকারী প্রতিষ্ঠান সেনাকল্যাণ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ফিরোজ হাসান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিক শামীম প্রমুখ এই সদস্যদের হাতে চেক তুলে দেন।

চেক নেওয়ার পর দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়। মোল্লা আলিফুজ্জামানের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আনিসুজ্জামান এবং মা মণিকা পারভিন কান্নার জন্য কথাই বলতে পারছিলেন না। চাপা ক্ষোভ, অভিমান আর দুঃখে ছোট তামারা প্রিমিয়ার মা আইনুন নাহারও কথা বলতে পারেননি। দুর্ঘটনায় আহত মেহেদি হাসান এবং সৈয়দা কামরুন নাহার উপস্থিত হয়ে চেক গ্রহণ করেন। নিহত উম্মে সালমা, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, তাহিরা তানভীন শশী রেজার পরিবারের সদস্যরা চেক নেন।

নিহত ছয় ব্যক্তির স্বজন ও আহত দুই যাত্রীর কাছে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর করা হয়। রাওয়া ক্লাব, ঢাকা, ১৭ অক্টোবর। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
নিহত ছয় ব্যক্তির স্বজন ও আহত দুই যাত্রীর কাছে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর করা হয়। রাওয়া ক্লাব, ঢাকা, ১৭ অক্টোবর। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

চলতি বছরের ১২ মার্চ ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের (ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ মডেল) উড়োজাহাজটি নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। এতে ৫১ জন নিহত হন। বিমানটিতে ৪ জন ক্রু, ৬৭ জন যাত্রীসহ মোট ৭১ জন আরোহী ছিলেন।

অনুষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিক শামীম জানান, এ পর্যন্ত মোট ১৬ জন হতাহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের কাছে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনার এক বছর পূর্তি হওয়ার আগেই অন্য যাত্রীদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে আদালত থেকে ওয়ারিশ সনদ লাগবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীর ক্ষেত্রে ন্যূনতম ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ হাজার ২৫০ ইউএস ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। আহত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ সংশ্লিষ্ট যাত্রীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়েছে।