ভান্ডারীকে কান্ডারি মানবে না আওয়ামী লীগ

নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী
নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সাংসদ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তিনি তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান। সংগঠনটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলের শরিক। ফলে কেন্দ্রে ভান্ডারীর যথেষ্ট প্রভাব আছে। কিন্তু নিজ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ তাঁর বিরুদ্ধে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  মনোনয়ন পেলেও আওয়ামী লীগকে কীভাবে তিনি সামাল দেবেন—তা নিয়ে এলাকায় এখন আলোচনা চলছে।

নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে সাংসদ হয়েছিলেন। দলবদল করে তিনি ২০০১ সালে বিএনপির টিকিটে হেরে যান। পরে বিএনপি ছেড়ে তিনি আবার গঠন করেন তরিকত ফেডারেশন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ওই সময় ফটিকছড়ির আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর পক্ষে কাজ করেছিল। পরে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ তাঁর বিরুদ্ধে চলে যায়।

ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, সাংসদ ভান্ডারী আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়বকে নিয়ে চলেন। ভূতপূর্ব সন্ত্রাসী তালিকায় তৈয়বের নাম ছিল। ৪ অক্টোবর ফটিকছড়ির আজাদী বাজারে গন্ডগোল পাকিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের পথসভা বানচাল করার জন্য তৈয়বকে দায়ী করা হচ্ছে। ওই দিন তৈয়বের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য তাঁর অনুসারীরা আজাদী বাজারে গন্ডগোল পাকিয়েছিলেন। একই দিন নাজিরহাটের ঝংকার মোড়ে মন্ত্রী মোশাররফের আরেকটি পথসভা বানচাল করার চেষ্টা করেছিলেন তৈয়বের অনুসারীরা।

দলীয় নেতারা জানান, ১৬ অক্টোবর ফটিকছড়িতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পথসভার আয়োজন করেছিলেন সাংসদ ভান্ডারী। শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে তিনি উপজেলা সদর দিয়ে হেঁয়াকো যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতা-কর্মীরা সাংসদের গাড়িবহরের পথ রোধ করেন। সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য গতিপথ ঘুরিয়ে সাংসদ ভান্ডারী ও তাঁর অনুসারীরা নাজিরহাট-সুয়াবিল-কাজীরহাট হয়ে হেঁয়াকোতে যান। তাঁর বহরে ছিলেন তৌহিদুল আলম ও আবু তৈয়ব।

দলীয় সূত্র জানায়, ফটিকছড়িতে ভান্ডারী ছাড়াও আওয়ামী লীগের অর্ধডজনের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাঁরা সবাই ভান্ডারীর বিরুদ্ধে। তাঁদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম এবং জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক খাদিজাতুল আনোয়ার বেশি সোচ্চার। আজাদী বাজারে পথসভা বানচাল হওয়ার পরদিন ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের সংবাদ সম্মেলনে পেয়ারুল ও খাদিজাতুল উপস্থিত ছিলেন।

সাংসদ ভান্ডারীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদ ভান্ডারী এলাকার সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে রাজনীতি করছেন। ২০০১ সালে তিনি বিএনপি থেকে নির্বাচন করে হেরে যান। তখন তিনি জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের সংগঠিত করেছিলেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংসদ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অনেক বড় সংগঠন। আজ যাঁরা আমার বিরোধিতা করছেন তাঁদের অনেকগুলো উপদল আছে, যাঁরা সবাই এমপি হতে চান। আমাকে অযোগ্য প্রমাণ করতে পারলে তাঁরা খুশি। কিন্তু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে যে অপশক্তি সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে তাঁদের জবাব দেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪-দল।’

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী বলেন, নানা কারণে ফটিকছড়িতে দলাদলি আছে। কিন্তু নেত্রী (শেখ হাসিনা) যাঁকে মনোনয়ন দেবেন তাঁর জন্য সবাই আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবেন।