সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদারে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের সামুদ্রিক নিরাপত্তা আরও জোরদারের উপায় উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে চতুর্দশ ‘হেডস অব এশিয়ান কোস্টগার্ডের’ (হ্যাকগাম) উচ্চপর্যায়ের সভার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্র নিরাপত্তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠী তাদের জীবন-জীবিকার জন্য সমুদ্রসম্পদের ওপর নির্ভরশীল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড এশীয় অঞ্চলে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করে আমাদের সমুদ্রকে নিরাপদ রাখবে—এটাই আমার প্রত্যাশা। এ জন্য আমরা সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশাবাদী এই সভার মাধ্যমে এশীয় অঞ্চলের সব কোস্টগার্ড ও মেরিটাইম সংস্থার প্রধানেরা অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে সামুদ্রিক নিরাপত্তা আরও জোরদার করার উপায় উদ্ভাবন করতে পারবেন।’

কোস্টগার্ডের সদস্যরা সমুদ্র এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দুরূহ কাজে নিয়োজিত থাকেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সভার মাধ্যমে সদস্য দেশগুলো তাদের সমুদ্রসীমা আরও নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।’

বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম দেশের সমুদ্রের গুরুত্ব অনুধাবন করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি সমুদ্রে ও সমুদ্রসম্পদে জনগণের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭৪ সালে ‘দি টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স অ্যান্ড মেরিটাইম জোন্স অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের প্রক্রিয়াও শুরু করেন। সে সময় মিয়ানমারের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়।

উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বঙ্গোপসাগরে এ দেশের মানুষের নানাবিধ স্বার্থ জড়িত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের অপর দুই অংশীদার ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমানা নির্ধারিত না থাকায় বিগত চার দশক ধরে আমরা সমুদ্র তলদেশের সম্পদ আহরণে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। জেলে সম্প্রদায় মৎস্য আহরণে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। আমাদের মৎস্যসম্পদ অন্য দেশের জেলেরা অবাধে শিকার করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ে তাঁর সরকার ২০০১ সালে ‘আনক্লস’ অনুসমর্থন করে এবং এর মধ্যে দিয়ে সমুদ্রে আমাদের ন্যায্য অধিকারের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিশাল জলরাশির তলদেশে খনিজসম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ সম্পদ আমরা উত্তোলন করতে সক্ষম হলে আগামী কয়েক প্রজন্ম লাভবান হবে। এ সম্পদের নিরাপদ ও পরিবেশগতভাবে টেকসই উত্তোলন বাংলাদেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে।’

বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ সমুদ্র পরিবহনের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের এ সামুদ্রিক এলাকায় মাদকদ্রব্য পাচার, অবৈধ অস্ত্র পাচার, মানব পাচার, অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ, জলদুস্যতা, সশস্ত্র ডাকাতি এবং আরও বিভিন্ন রকম অবৈধ কার্যকলাপ সংঘটিত হয়ে থাকে। এসব অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে শুধু দেশীয় নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অপরাধীরাও জড়িত।’

শেখ হাসিনা বলেন, অপরাধীরা অনেক সময় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকে। কাজেই একক দেশের পক্ষে এদের দমন করা সম্ভব নয়। একমাত্র সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এসব কর্মকাণ্ড দমন করতে।