মিষ্টি পানির ডলফিনের বিপদ বাড়ছে

>

• আজ আন্তর্জাতিক ডলফিন দিবস
• রাজধানীতে আজ থেকে তিন দিনব্যাপী ডলফিন মেলা
• দেশে ১২ প্রজাতির ডলফিন আছে
• দেশে ডলফিনের বড় অংশের বাস সুন্দরবনে
• দেশের নদীতে ডলফিনের জন্য বিপদ বাড়ছে

বাংলাদেশে ডলফিনের জন্য অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেশ দুই–ই আছে। অনুকূল এই অর্থে যে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই তারা প্রথমবারের মতো তিনটি বসবাসের এলাকা পায়। সুন্দরবনের তিনটি এলাকাকে তাদের জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। পরে মেঘনা নদীর তিন এলাকাও ডলফিনের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিতি পায়। আর প্রতিকূল এই কারণে যে বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০টি ডলফিন জেলেদের জালে আটকে গিয়ে ও ইঞ্জিন নৌকার আঘাতে মারা যায়। তবে আশার কথা, দেশে এখনো সাড়ে সাত হাজার ডলফিন টিকে আছে।

বাংলাদেশের দেখাদেখি কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড. পাকিস্তান, ভারত ও নেপালও ডলফিনের জন্য তাদের নদীতে অভয়ারণ্য ঘোষণা করে। তারা ডলফিন রক্ষায় বেশ কিছু উদ্যোগও নিয়েছে। এতে মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে ডলফিন বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের নদীগুলোতে ডলফিনের জন্য যত ধরনের বিপদ আছে তা দিনে দিনে বাড়ছেই। এসব বিপদ দূর করতে কার্যকর কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করছেন দেশের ডলফিন ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।

এই পরিস্থিতিতে আজ বুধবার দেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ডলফিন (স্বাদু পানির) দিবস পালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে আজ থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে তিন দিনব্যাপী ডলফিন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ৪ থেকে ১৫ নভেম্বর সুন্দরবন ও তার আশপাশের এলাকায় ডলফিন মেলা অনুষ্ঠিত হবে। বন বিভাগ ও প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন যৌথভাবে এই মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় ডলফিন রক্ষায় সচেতনতামূলক প্রদর্শনী, আলোচনা, পুতুলনাচসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। এবার দিবসটির স্লোগান—‘নদীর পানি পরিষ্কার রাখো, ডলফিনদের খেলতে দাও’।

জানতে চাইলে আইইউসিএনের এ দেশীয় পরিচালক রাকিবুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, একটি নদীর প্রতিবেশ কতটুকু ভালো আছে তা বোঝা যায় সেখানে ডলফিনের সংখ্যা কত তা দিয়ে। আর নদী হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাণ। ফলে ডলফিন রক্ষা করা গেলে নদী ও বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা করা যাবে। আর এই কাজ শুধু বন বিভাগ বা কোনো সংস্থার পক্ষে এককভাবে করা সম্ভব না। এ জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। 

কোন নদীতে কত ডলফিন, কত বিপদ
দেশে যে ১২ প্রজাতির ডলফিন আছে তার মধ্যে স্বাদু পানির ডলফিন হচ্ছে দুই প্রজাতির। গাঙ্গেয় ও ইরাবতী ডলফিন। বন বিভাগসহ চারটি সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, দেশে ডলফিনের বড় অংশের বাস সুন্দরবনে। সাড়ে ৭ হাজার ডলফিনের মধ্যে ৬ হাজার থাকে সুন্দরবনে। এর মধ্যে ইরাবতী ডলফিনই আছে ৫ হাজার ৮০০টি। সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে পেতে রাখা জেলেদের কারেন্ট জালে আটকা পড়েও ডলফিন মারা যায়।

২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়ার নেতৃত্বে হালদা নদীর ডলফিন নিয়ে একটি জরিপ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ওই নদীতে প্রায় ২০০ ডলফিনের বাস। তবে সেখানে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৮টি ডলফিনের মৃতদেহ নদীতে ভাসতে দেখা গেছে। ডলফিনের এই ধারাবাহিক মৃত্যুর পর সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি বলছে, মূলত বালুবাহী ট্রলারের আঘাতে এসব ডলফিন মারা যাচ্ছে। পরে ডলফিনের বিচরণ এলাকায় এ ধরনের ট্রলার চলাচল নিষিদ্ধ করার পর ডলফিনের মৃত্যু কমে যায়।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডব্লিইউসিএস) নেতৃত্বে মূলত সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরের ডলফিনের ওপর জরিপটি করা হয়। পরে ওই সংস্থার গবেষক ব্রায়ান স্মিথের নেতৃত্বে কুশিয়ারা নদীতে জরিপ করে ৪৩টি, কর্ণফুলী ও সাঙ্গু নদে ১২৫টি, যমুনা নদীতে ৭৪টি ডলফিন পাওয়া গেছে। আইইউসিএনের জরিপে রূপসা নদীতে ৩৫টি ডলফিন পাওয়া গেছে। এর বাইরে ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা ও যমুনা নদীতে আইইউসিএন, ইউএনডিপি, ডব্লিইউসিএস ডলফিনের জরিপ চলছে।

জানতে চাইলে বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিশ্বে প্রথমবারের মতো ডলফিনের অভয়ারণ্য করেছি। ডলফিনসহ বণ্য প্রাণীদের রক্ষায় ২০১২ সালে আইন করেছি। কিন্তু সেই আইন বাস্তবায়ন ও অভয়ারণ্যগুলোতে ডলফিনের বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখি না।’ দেশে এখনো যে পরিমাণে ডলফিন আছে, তা রক্ষা করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য বন বিভাগের উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে।