মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, কী ধরনের রাজনীতি?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফােকাস বাংলা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফােকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতির নামে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা পুনরাবৃত্তির বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। জনগণের জন্যই তাঁর রাজনীতি এবং মানুষ পুড়িয়ে হত্যা এটা কী ধরনের রাজনীতি—প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা কোনোভাবেই আর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।’

শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এ ধরনের জঘন্য অপকর্মের সঙ্গে যারা যুক্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
তাঁর সরকার আগুনসন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসংলগ্ন চানখাঁরপুল এলাকায় ‘শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ উদ্বোধনের সময় এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়া ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। প্রায় ৪ হাজার মানুষ অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়, যার মধ্যে প্রায় ৫০০ মানুষ আগুনে পুড়ে মুত্যুবরণ করে। সাড়ে ৩ হাজার গাড়ি ভাঙচুর কো হয়, যার মধ্যে বিআরটিসির জন্য সদ্য ক্রয় করা ডাবল ডেকার বাসগুলোও ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনো সেসব আগুনে পোড়া রোগীদের অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে এবং তাদের সাহায্যার্থে তাঁর সরকার সব রকম প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকেরাও তাঁদের সীমিত সামর্থ্য নিয়েই পীড়িত মানুষের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় (পেট্রলবোমা হামলার ঘটনা) বাংলাদেশের মানুষই তাদের প্রতিরোধ করেছিল।
পেট্রলবোমা হামলায় পথচারী, গাড়িচালক-হেলপার, যাত্রীদের পুড়িয়ে হতাহত করার পরিপ্রেক্ষিতে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসায় বর্তমান সরকার ২০১৬ সালে ৫২২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
মোট ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’-এ বিশ্বের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ উন্নততর চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী এই বার্ন ইউনিটের নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত সেনবাহিনী ও এলাকাবাসীসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে এখানে উন্নত যন্ত্রাংশ সংযোজন, বিশেষজ্ঞের অন্তর্ভুক্তিসহ অন্যান্য উন্নয়নের কাজ করে যাব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি যাতে একটি উন্নত বিশ্বমানের ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে ওঠে সেই ব্যবস্থা অবশ্যই আমরা করব। যাতে আগুনে পুড়লে আমাদের কোনো লোককে আর বিদেশে যেতে না হয়। দেশে বসেই যেন চিকিৎসাটা পায় এবং এ জন্য নার্সদেরও বিদেশ থেকে প্রয়োজনে ট্রেনিং করিয়ে আনা হবে এবং নতুন যন্ত্রপাতি ব্যবহারে টেকনিশিয়ানদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, অনেক দূর আমাদের যেতে হবে। তবে আমাদের ৫ বছর সময় প্রায় শেষ এবং সামনে নির্বাচন।

প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ যদি নৌকা মার্কায় ভোট দেন, আমরা আবার আসব (ক্ষমতায়), তখন এই কাজ আরও দ্রুত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, ‘আর যদি কোনো পরিবর্তন (ক্ষমতার পালাবদল) হয়, তাহলে ওই বার্ন ইউনিটের মতো এটাও যেন থমকে না যায়, সেটাও সবাইকে দেখতে হবে। কারণ এটার সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কাজ অব্যাহত থাকুক, সেটাই আমরা চাচ্ছি।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইঞ্জিনিয়ারিং চিফ মেজর জেনারেল মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সিরাজুল হক খান।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুটি স্মারক উপহার দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও সেনাবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।
বার্ন ইউনিট সূত্র জানায়, এই ইনস্টিটিউটে পোড়া রোগীরা যেমন উন্নততর সেবা পাবে, তেমনি চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ পাবেন।

১২ তলাবিশিষ্ট এই ইনস্টিটিউটে ৫৪ ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট, ৬০ শয্যাবিশিষ্ট হাইডেফিসিয়েন্সি ইউনিট, ১২টি অপারেশন থিয়েটার এবং অত্যাধুনিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জরুরিভাবে রোগী নিয়ে আসার জন্য ভবনের ছাদে হেলিপ্যাড সুবিধা থাকছে। সোলার প্যানেল ও বৃষ্টির পানি সঞ্চয়েরও ব্যবস্থা থাকবে। পার্কিংয়ে একসঙ্গে ১৮০টি গাড়ি রাখা যাবে। ঢামেক হাসপাতালের পুরাতন ভবনের সঙ্গে একটি ফুটওভারব্রিজ দিয়ে ইনস্টিটিউট ভবনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হবে।

এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার চিকিৎসাসংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনার কাজ শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি জার্মানি থেকে আনা হয়েছে। এ ছাড়া ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও কানাডা থেকে কিছু সরঞ্জাম আনা হবে। হাসপাতালটির জনবল নিয়োগের জন্য প্রায় ২ হাজার ২০০ পদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।