মেয়েটি কার জিম্মায় থাকবে?

জর্ডানফেরত এক কিশোরীকে কেউ নিতে চাচ্ছে না। এই কিশোরী এখন রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তত্ত্বাবধানে ভর্তি আছে। মেয়েটি অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরেছে ১৯ অক্টোবর। তার বয়স ১৫ বছর। তবে পাসপোর্টে তার বয়স দেওয়া ২৭ বছর। সুনামগঞ্জের এই কিশোরীর ছোটবেলায় মা–বাবা মারা যান। পরে দূর সম্পর্কের এক চাচার কাছে বড় হয়। চাচা গত বছরের জুন মাসে ১৪ বছর বয়সেই বিদেশ পাঠিয়ে দেন।

মেয়েটি জর্ডান যাওয়ার পর দুই মাসের বেতন পায়নি। পরে ১৭ মাসের পুরো বেতন চাচার নামে দেশে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু মেয়েটি দেশে ফেরার পর এই চাচা আর মেয়েটির দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। মেয়েটিও দেশে ফিরে আর চাচার কাছে যাবে না বলে জানায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কাছে। মেয়েটির ভয়, চাচার কাছে গেলেই তাকে আবার বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারপর বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে মেয়েটিকে ব্র্যাকের লার্নিং সেন্টারে রাখা হয়। কিন্তু লার্নিং সেন্টারে থাকা অবস্থায় মেয়েটি আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে তাকে আরেকটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ওই হাসপাতালেও মেয়েটি আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাই তাকে ২১ অক্টোবর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু এরপর মেয়েটির দায়িত্ব কে নেবে? ২১ অক্টোবর প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক তানভীর হোসেনের সই করা চিঠিতে মেয়েটির বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে মন্ত্রী ও সচিবের একান্ত সচিব বরাবর। মেয়েটি সরকারের বিএমইটির ছাড়পত্রসহ বৈধভাবেই জর্ডান গিয়েছিল বলেও চিঠিতে জানানো হয়েছে।

২১ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উপসচিব, পরিচালক (প্রশাসন ও উন্নয়ন) জহিরুল ইসলামের সই করা চিঠিতে মেয়েটিকে জরুরিভাবে তার পরিবার বা নিকট আত্মীয়ের কাছে হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে। এ চিঠি দেওয়া হয়েছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর। এ চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে জর্ডানের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও সংশ্লিষ্টদের কাছে। তারপর আর কোনো অগ্রগতি নেই।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন,‘মেয়েটি বারবার আত্মহত্যা করতে চাচ্ছে। এই অবস্থায় মেয়েটির দায়িত্ব নেওয়া কঠিন। আর ব্র্যাকের পক্ষেই বা তা কত দিন সম্ভব। মন্ত্রণালয়কে বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মেয়েটির কোনো ব্যবস্থা হয়নি। মেয়েটি কার জিম্মায় থাকবে তা অনিশ্চিত।’

ব্র্যাকের তথ্য কর্মকর্তা আল আমিন নয়ন বলেন, ‘জাতীয় মানসিক হাসপাতালে নারী রোগী ভর্তি করলে তাঁর সঙ্গে নারী অ্যাটেনডেন্স দিতে হয়, তা না হলে রোগী ভর্তি করা যায় না। বিদেশফেরত দুই নারী যাঁরা ব্র্যাকের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁরা হাসপাতালে ডিউটি করছেন।’

হাসপাতালটির চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মেয়েটির মানসিক অবস্থা বেশ খারাপ। ফলে হাসপাতালে থাকতে হতে পারে আরও কয়েক দিন। এ ক্ষেত্রে তো মন্ত্রণালয়কেই দায়িত্ব নিতে হবে। মন্ত্রণালয়–সংশ্লিষ্টদের বারবার ফোন করেও কোনো উত্তর পাচ্ছেন না তাঁরা। মেয়েটির চাচাও তাঁদের জানিয়েছেন, তিনি মেয়েটির দায়িত্ব নেবেন না। অথচ এই চাচা মেয়েটির বেতনের পুরো টাকাই নষ্ট করেছেন। মেয়েটির গ্রাম থেকে লোকজন ফোন করে শুধু জানতে চান, মেয়েটি কেমন আছে।

প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের পক্ষ থেকে একজন পুরুষ কর্মী হাসপাতালে মেয়েটির খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানালেন ডেস্কের কর্মকর্তা তানভীর হোসেন। তাঁদের পক্ষে কোনো নারী কর্মীকে হাসপাতালে রাখা সম্ভব না বলেও জানালেন এ কর্মকর্তা।