বিডিবিএলে ঋণ কেলেঙ্কারি, ৬ ব্যবসায়ীকে তলব

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডে (বিডিবিএল) ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ছয় ব্যবসায়ীকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বুধবার দুদকের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান তাঁদের চিঠি দিয়েছেন।

দুদক সূত্র প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, ওই ছয় ব্যবসায়ীকে ৩১ অক্টোবর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

যাঁদের তলব করা হয়েছে তাঁরা হলেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের এম এম ভেজিটেবল অয়েল প্রডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন, একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হেফাজাতুর রহমান, ঢাকা ট্রেডিং হাউসের মালিক টিপু সুলতান, ট্যাটকা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন, টিআর স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওহিদুল আলম, একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. তৌফিকুল আলম।

এর আগে একই অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বিডিবিএলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুদকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রথম পর্যায়ে শেষ করা হয়েছে। এখন ঋণগ্রহীতাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হচ্ছে।

দুদকের কাছে থাকা অভিযোগে বলা হয়েছে, অযোগ্য ব্যক্তি ও ভুঁইফোড় কিছু প্রতিষ্ঠানকে জামানতবিহীন এবং অস্তিত্বহীন জামানত রেখে অর্ধশত কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে বিডিবিএল। অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে প্রাথমিক যাচাই–বাছাই শেষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানের দায়িত্ব পেয়েই গুলশান আনোয়ার প্রধান বিডিবিএল এবং ঋণ–সংক্রান্ত যাবতীয় নথি সংগ্রহ করেন। অনুসন্ধানের দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি বিডিবিএলের সাবেক ও বর্তমান জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এর আগে চারটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণ–সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তলব করে পৃথক তিনটি চিঠি দেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রের মূল কপি সংরক্ষণ করে সত্যায়িত ছায়ালিপি সরবরাহের জন্য ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অনুরোধ করা হয়।

তলব করা নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখার গ্রাহক এম এম ভেজিটেবলের হিসাব খোলার ফরম, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সমঝোতাপত্র (এমওইউ), গ্রাহকের ঋণের আবেদনপত্র, শাখার সুপারিশ, ক্রেডিট কমিটির অনুমোদন, পরিচালনা পর্ষদের ৬৫ ও ৬৬তম সভায় উপস্থাপিত বোর্ড মেমো এবং বোর্ড রেজল্যুশনপত্র এবং শাখায় প্রেরিত অনুমোদনপত্র। ওই ঋণ ও এলটিআরের (লোন অ্যাগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিট) বিপরীতে শাখায় রাখা জামানত, ঋণের বিপরীতে জামানত হিসাবে ১২ কোটি টাকার এফডিআরসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র।

ওই গ্রাহকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত কপি এবং ওই ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার ওই গ্রাহকের ওপর ওই ব্যাংকের নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত কপিও চাওয়া হয়।

দ্বিতীয় চিঠিতে বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখার গ্রাহক ঢাকা ট্রেডিং হাউসের একই ধরনের নথি তলব করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা ট্রেডিং হাউসের সঙ্গে খাদ্য বিভাগের সম্পাদিত সমঝোতাপত্রের (স্থানীয় বাজার থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন গম সংগ্রহের) সত্যায়িত কপি, ওই গ্রাহকের ওপর নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোম্পানির ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অডিট প্রতিবেদনের সত্যায়িত কপি, ওই গ্রাহকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত কপি এবং ব্যাংকের নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যায়িত কপি চাওয়া হয়।

এ ছাড়া প্রিন্সিপাল শাখার গ্রাহক ট্যাটকা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং এ এইচ জেড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেডের ঋণসংক্রান্ত যাবতীয় নথি তলব করা হয়।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, এসব নথি সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জালিয়াতি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য অনুসন্ধান কর্মকর্তার হাতে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবেন তিনি।