কুষ্টিয়ায় হৃদয় হত্যা মামলায় ৩ জনের ফাঁসি

স্কুলছাত্র হৃদয় হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা তাছলিমা খাতুন। ছবি: তৌহিদী হাসান
স্কুলছাত্র হৃদয় হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা তাছলিমা খাতুন। ছবি: তৌহিদী হাসান

হৃদয়ের মায়ের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। সাত বছর ধরে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে কেঁদেছেন এই মা। আজ বিচার পেলেন তিনি।

কুষ্টিয়ায় আলোচিত স্কুলছাত্র মোতাসসিম বিন মাজেদ ওরফে হৃদয় (১৪) অপহরণ ও হত্যা মামলায় তিন আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কুষ্টিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা) মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান এ আদেশ দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকার গফফার খানের ছেলে সাব্বির খান, হাউজিং এ ব্লকের আজম আলীর ছেলে হেলাল উদ্দীন ওরফে ড্যানী ও ভেড়ামারা উপজেলার দশমাইল এলাকার মৃত মোসলেম শেখের ছেলে আবদুর রহিম শেখ ওরফে ইপিয়ার। রায় ঘোষণার সময় সাব্বির খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি দুই আসামি পলাতক রয়েছেন।

রায় ঘোষণার পর হৃদয়ের মা তাছলিমা খাতুন কান্না জড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন,‘আমি রায়ে খুশি হয়েছি। ন্যায় বিচার পেয়েছি। রাস্তায় ছেলে মেয়েদের নিয়ে চলতে সমস্যা হয়। আসামির লোকজন ভয়ভীতি দেখায়। পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত রায় কার্যকর করা হয়।’

রায় ঘোষণার পরপরই আসামি সাব্বির খানকে কারাগারে নেওয়া হয়। আদালত চত্বর থেকে বের হয়ে সাব্বির নিজেই তার সাজার কথা উপস্থিত এক আত্মীয়কে উচ্চ স্বরে জানান। এ সময় ওই আত্মীয় তাঁকে জানান, জামিনের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো টেনশন করো না।

স্কুলছাত্র মোতাসসিম বিন মাজেদ ওরফে হৃদয়।
স্কুলছাত্র মোতাসসিম বিন মাজেদ ওরফে হৃদয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরের মোল্লাতেঘরিয়া এলাকার প্রবাসী মাজেদুল ইসলামের ছেলে হৃদয়। সে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ২০১১ সালের ২৩ মে সন্ধ্যায় হৃদয় কলম কাগজ কেনার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে না। ২৪ মে তাঁর মা তাছলিমা খাতুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে সেটি অপহরণ মামলা হয়। ঘটনার প্রায় সাড়ে চার মাস পর ওই বছরের ৪ অক্টোবর ভোরে ভেড়ামারা নয়মাইল এলাকায় একটি মাঠ থেকে মাটি খুঁড়ে হৃদয়ের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাছলিমা খাতুন ছেলের পরনে থাকা প্যান্ট ও বেল্ট দেখে লাশ শনাক্ত করেছিলেন। এর আগে হেলাল উদ্দিনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী হৃদয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। জবানবন্দিতে হেলাল জানিয়েছিলেন, হত্যায় তারা তিনজন জড়িত ছিলেন। অপহরণের পর দুই লাখ টাকা মুক্তিপণও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হৃদয়কে হেফাজতে রাখার ঝামেলা হওয়ায় ২৪ মে তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি আকরাম হোসেন দুলাল সাংবাদিকদের বলেন, ২৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তিনজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এক আসামি জামিনে পলাতক রয়েছেন। আর একজন ঘটনার পর থেকেই পলাতক। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

আকরাম হোসেন আরও বলেন, মুক্তিপণ নেবার পরও হৃদয়কে ফেরত দেওয়া হয়নি। এ রায়ের জন্য হৃদয়ের মা সাত বছর ধরে অপেক্ষায় ছিল। এটা কুষ্টিয়াবাসীর বিজয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত সাব্বির খানের মামা সেলিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, রায়ে তারা ক্ষুব্ধ। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।