ত্বকী হত্যার বিচারে বাধা কোথায়, প্রশ্ন আইভীর

ত্বকীর ২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তা ও পুরস্কার বিজয়ী শিশুরা। সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, ঢাকা, ২৬ অক্টোবর। ছবি: প্রথম আলো
ত্বকীর ২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তা ও পুরস্কার বিজয়ী শিশুরা। সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, ঢাকা, ২৬ অক্টোবর। ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জবাসী একদিন ত্বকী হত্যার বিচার করে ছাড়বে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, ফাঁসি হয়েছে, ২১ আগস্ট হত্যার, শেখ রাসেল হত্যার বিচার হয়েছে। তাহলে ত্বকী হত্যার বিচারে বাধা কোথায়?

ত্বকীর ২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ ‘জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা ২০১৮’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘যেকোনো কারণেই হোক এই বিচার পিছিয়ে যাচ্ছে। আমরা এটি চাই না। সাত খুনের হত্যার যদি বিচার হতে পারে, তাহলে ত্বকী হত্যার বিচার নয় কেন? ত্বকীকে যারা হত্যা করেছে, সেই পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস নারায়ণগঞ্জের অনেকের ছিল না। ত্বকী হত্যার প্রতিবাদে মঞ্চ করে আমরা প্রতিবাদ করতে পারছি। ত্বকী আমাদের কথা শিখিয়েছে, সাহস জুগিয়েছে। সে সাহসের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘অনেকে ভেবেছিল, ত্বকীকে হত্যা করে নারায়ণগঞ্জ স্তব্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ তো স্তব্ধ হয়নি। বরং সারা বিশ্ব, বাংলাদেশ প্রতিবাদ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো বাধাই বাধা নয়, যেকোনো কৌশলগত কারণে হয়তো তিনি বিচার করছেন না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তিনি এর বিচার করবেন।’

২০১৩ সালের ৬ মার্চ তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে অপহরণ ও খুন করা হয়। ৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা চারারগোপ এলাকার খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

ত্বকী হত্যার পাঁচ বছর হয়ে গেলেও এর বিচার হচ্ছে না উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘আমরা একটা সময় খুব আশা করেছিলাম বিচার হবে। কিন্তু সেই আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, ত্বকী হত্যার বিচারের উদ্যোগ যেন তিনি নেন।’ তিনি বলেন, ‘মনের মধ্যে স্পষ্ট হচ্ছে যে একটা অন্যায়কে অন্য একটা অন্যায় দিয়ে চাপা দেওয়া হচ্ছে। এটা যেন সফল না হয়। ত্বকীর যারা হত্যাকারী তাদের আদালতে নিয়ে এসে আইন অনুযায়ী শাস্তি যেন দেওয়া হয়। এতে ত্বকীর মা–বাবার শুধু দুঃখ ঘুচবে না, সারা দেশের মানুষের সান্ত্বনার জায়গা থাকবে।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, ত্বকী হত্যার পেছনে যাদের নাম দেওয়া হয়েছিল, তারা নারায়ণগঞ্জে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শান্তিশৃঙ্খলা বাহিনী কী করছে, সরকার কী করছে? আর যিনি কথা দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তিনিইবা কী করছেন? এ রকম একটি হত্যা চাপা দিয়ে নরপিশাচদের সাহায্য করা হচ্ছে দলের স্বার্থে। এটা লজ্জার কথা। যারা নরপিশাচ, যারা নিপীড়ক, তারা কখনোই জয়ী হতে পারবে না।

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘একটা বিচারহীনতার সংস্কৃতির মধ্যে আমরা বাস করছি। বিচারটা হচ্ছে না, কারণ রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী পর্যায় থেকে বাধা আসছে। এই বিচারহীনতাকে আমরা যদি সমর্থন করি, তাহলে ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ থেকে যাব।’ তাঁর আশা, ত্বকী হত্যার বিচার এই দেশের মাটিতে একদিন হবেই।

অনুষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার তিনটি বিভাগে মোট ৬০ জন কিশোর–কিশোরীকে পুরস্কৃত করা হয়। সভাপতির বক্তব্যে ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, মানবসভ্যতার হাজার বছরের ইতিহাসে কখনোই হত্যা মানবতার ওপরে জায়গা করতে পারেনি। নতুন প্রজন্ম অবশ্যই দুঃশাসনের পরিত্রাণ পেতে মুক্তির বিজয় নিয়ে আসবে। তিনি ত্বকীসহ নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সব হত্যার বিচার চান।