শ্রমিক ধর্মঘটে অ্যাপ ছাড়াই 'খেপ'

যাত্রী খুঁজছেন এই চালক। ছবি: প্রথম আলো
যাত্রী খুঁজছেন এই চালক। ছবি: প্রথম আলো

পরিবহনশ্রমিকদের ধর্মঘটে রাজধানী ঢাকার সড়কে বিআরটিসি ছাড়া যাত্রীবাহী অন্য কোনো বাস নেই। বাসসংকটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সারা দেশের মানুষ।

আজ সোমবার ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন মিরপুরে যেতে ফার্মগেটে অনেকক্ষণ ধরে বাসের আশায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার চাকরিজীবী সাব্বির হোসেন। তাঁর পাশে কিছুক্ষণ পরপর মোটরসাইকেল এসে থামছে। সাব্বির কোথায় যাবেন, জানতে চাইছেন মোটরসাইকেলচালকেরা।

সাব্বির এতে তেমন সাড়া দিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে সাব্বির হোসেন বলেন, রাইড শেয়ারিংয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করা এসব মোটরসাইকেলচালক তাঁদের প্রচলিত নিয়ম না মেনে চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় যেতে চাইছেন। এতে রাজি নন তিনি। কারণ, এভাবে ভাড়া বেশি পড়বে। এ ছাড়া অপরিচিত মানুষের মোটরসাইকেলে উঠলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিছু হলে কাকে ধরবেন?

সাব্বিরের কথার সত্যতা মিলল ফার্মগেটে দাঁড়িয়ে থেকে। প্রায় দুই ঘণ্টা ফার্মগেটের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, মোটরসাইকেলচালকেরা মানুষকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে কোনো অ্যাপের মাধ্যমে নয়, সরাসরি ভাড়া খাটছেন। কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এখন রাস্তায় গণপরিবহন না থাকায় তাঁরা অ্যাপ বন্ধ রেখে ভাড়া খাটছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক জানান, অ্যাপের মাধ্যমে সেবা দিলে ভাড়া কম আসে, সে তুলনায় চুক্তি করে ভাড়ায় গেলে বেশি লাভ হয়। তা ছাড়া রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানকে কমিশনও দিতে হয় না।

ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে চারটি মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রত্যেকের কাছে অতিরিক্ত একটি করে হেলমেট। পাশে যেতেই তাঁরা জানতে চাইলেন, কোথায় যাবেন?

‘আপনারা অ্যাপের মাধ্যমে যাবেন’—এমন প্রশ্নে উত্তর এল নেতিবাচক। তবে সরাসরি ভাড়ায় যেতে রাজি। অ্যাপের মাধ্যমে যেতে না চাওয়ার কারণ সম্পর্কে তাঁদের একজন বললেন, অ্যাপ দিয়ে কী হবে? এমনি তো যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। আর চাহিদাও বেশি। অ্যাপ চালু রাখলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিতে হবে, তাই তাঁরা এভাবেই ভাড়া খাটছেন।

উত্তরা যেতে ইচ্ছুক এক যাত্রী নিরুপায় হয়ে অ্যাপ ছাড়া চুক্তিতেই মোটরসাইকেলে চাপলেন। আল আমিন নামের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘বাসের দেখা নেই, তাই বাধ্য হয়ে ৩০০ টাকায় মোটরসাইকেলে করে উত্তরা যাচ্ছি।’

ফার্মগেটে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় মোটরসাইকেলচালকেরা। ছবি: প্রথম আলো
ফার্মগেটে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় মোটরসাইকেলচালকেরা। ছবি: প্রথম আলো

অ্যাপ ছাড়া এভাবে যাওয়া কতটা নিরাপদ—এ ব্যাপারে আল আমিন বলেন, ‘কী করব, বাধ্য হয়েই যাচ্ছি।’

পাশ থেকে এক পথচারী বলে উঠলেন, এভাবে অ্যাপ ছাড়া চুক্তিভিত্তিক যাওয়া নিরাপদ নয়। এতে চালক বা যাত্রী কারও নাম-পরিচয় জানা যায় না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো পক্ষের দায় নেই। সংশ্লিষ্ট অ্যাপের প্রতিষ্ঠানের কাছেও কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই।

কারওয়ান বাজার সোনারগাঁও হোটেলের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৫টি মোটরসাইকেলের চালক মানুষ দেখে কোথায় যাবেন বলে হাঁকডাক দিচ্ছেন। দুজন মোটরসাইকেলচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর তাঁরা অ্যাপ বন্ধ রেখে চুক্তিভিত্তিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এতে তাঁদের বাড়তি আয় হচ্ছে। তবে তাঁরা কোন প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ সেবা দিচ্ছেন, তা বলতে রাজি হননি।