খালেদার আপিলের রায় মঙ্গলবার

কারাগার থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। বিএসএমএমইউ, ঢাকা, ৭ এপ্রিল। ছবি: সাজিদ হোসেন
কারাগার থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। বিএসএমএমইউ, ঢাকা, ৭ এপ্রিল। ছবি: সাজিদ হোসেন

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা ও অর্থদণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আপিলের ওপর আগামীকাল মঙ্গলবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। এর সঙ্গে ওই মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দুই আসামির করা আপিল ও খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আবেদনও রায়ের জন্য রাখা হয়েছে।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ সোমবার শুনানি শেষে রায়ের এদিন ধার্য করেন। ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণার পাঁচ মাসের মাথায় গত ১২ জুলাই হাইকোর্টে আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ রায় দেন। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির সবাইকে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এ অর্থদণ্ডের টাকা প্রত্যেককে সমান অঙ্কে প্রদান করতে হবে বলে ওই রায়ে বলা হয়।

কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। কারাগারে থাকা অপর আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ পৃথক আপিল করেন। আর খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদক একটি আবেদন করে, যার ওপর শুনানি নিয়ে ২৮ মার্চ আদালত রুল দেন। এই পৃথক তিনটি আপিল ও দুদকের আবেদনের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়।

আপিলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সাজা বাতিল করে তাঁকে খালাস দেওয়ার আরজি জানিয়েছেন। দুদকের আইনজীবী শুনানিতে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করে যাবজ্জীবন চেয়েছেন। আর বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বহালের আরজি জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়ার করা আপিলসহ তিন আসামির আপিল ও দুদকের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদনের ওপর ৩২ দিন শুনানি হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট আগামীকাল মঙ্গলবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছেন। ওই মামলায় অতিরিক্ত সাক্ষ্য চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদন খারিজ করে ও শুনানি শেষে রায়ের এই দিন ধার্য করা হয়।

আদালতে খালেদার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন ও আবদুর রেজাক খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। কাজী সালিমুল হকের পক্ষে আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে আইনজীবী মো. আহসান উল্লাহ শুনানিতে অংশ নেন।

এর আগে গত ১৬ জুলাই আপিল বিভাগ এক আদেশে ওই আপিল (হাইকোর্টে থাকা খালেদার আপিল) নিষ্পত্তিতে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বাড়ান। আপিল নিষ্পত্তিতে সময় বাড়াতে খালেদা জিয়ার করা আবেদন আজ সকালে আপিল বিভাগে খারিজ হয়। একই সঙ্গে ওই মামলায় অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণ চেয়ে হাইকোর্টে নথিভুক্ত থাকা খালেদার করা আবেদনটি ৩০ অক্টোবরের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ের দিন থেকে খালেদা জিয়া নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। এরপর চিকিৎসার জন্য ৬ অক্টোবর তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি ওখানে চিকিৎসাধীন।