ধর্মঘটে শিশুর মৃত্যু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি জাপা এমপির

ধর্মঘটের নামে সারা দেশে পরিবহনশ্রমিকেরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন। একটি শিশুকে তাঁরা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। মানুষের মুখে পোড়া মবিল মেখে দিয়ে তাঁরা মানুষের আত্মমর্যাদায় আঘাত করছেন। তাঁদের এই তাণ্ডবে নীরব ভূমিকা পালন করছে পুলিশ।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় এসব কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমান। তিনি এ বিষয়ে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিবৃতি দাবি করেন।

পরিবহন ধর্মঘটের প্রসঙ্গ তুলে পীর ফজলুর রহমান বলেন, এই সংসদে পাস করা সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ধারা পরিবর্তনের দাবিতে দুই দিন ধরে পরিবহনশ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করছেন। এই অবরোধের নামে শ্রমিকদের কেউ কেউ নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন। বিভিন্ন স্থানে যাত্রী ও চালকদের মুখে পোড়া মবিল লেপ্টে দিচ্ছেন।

ফজলুর রহমান আরও বলেন, ‘একটি অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত শিশুটি মারা গেছে। এই অবরোধে সারা দেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অবরোধের নামে মানুষের আত্মমর্যাদায় যাঁরা আঘাত করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নীরব রয়েছে। এই ঘটনা আমাদের আহত করেছে। আমি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করছি।’

রোববার মৌলভীবাজারে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ধর্মঘট চলাকালে ওই অ্যাম্বুলেন্সকে বাধা দেন শ্রমিকেরা। নিহত সাত দিনের কন্যাশিশুটির বাবা বড়লেখা সদর ইউনিয়নের আজমির গ্রামের কুটন মিয়া।

শিশুর চাচা আকবর আলী বলেন, ‘শনিবার রাত থেকে আমার ভাতিজি কিছুই খাচ্ছিল না, শুধু কাঁদছিল। রোববার সকালে বড়লেখা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁকে সিলেট নেওয়ার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকদের কথামতো আমরা তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দিই।’

পথে পথে তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সটিকে পরিবহনশ্রমিকেরা বাধা দেন অভিযোগ করে আকবর বলেন, সিলেট যাওয়ার পথে বড়লেখা উপজেলার দরগাবাজারে অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে দেন আন্দোলনরত পরিবহনশ্রমিকেরা। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেন। একইভাবে দাসেরবাজার এলাকায় আটকানোর পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে চান্দগ্রাম বাজারে আবারও শ্রমিকেরা গাড়িটি আটকান। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সচালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করা হয়। শিশুটি তখন একেবারেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পথিমধ্যে তাকে বিয়ানীবাজার হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারার সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে গতকাল রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গাড়ির চালকদের হেনস্তা করা হয়েছে। চালকদের কারও মুখে বা গাড়িতে দেওয়া হয়েছে পোড়া মবিল, কাউকে করানো হয়েছে কানে ধরে ওঠবস। ধর্মঘট না মেনে গাড়ি চালানোয় কারও গাড়ির টায়ার পাংচার করে দেওয়া হয়, আবার কারও গাড়িতে ছুড়ে মারা হয় পচা ফল।