দুর্বৃত্তদের সামনে সাহস করে দাঁড়িয়ে যান লিমন

হামলায় আহত লিমন হোসেন। গতকাল সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে।  প্রথম আলো
হামলায় আহত লিমন হোসেন। গতকাল সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে। প্রথম আলো
>
  • লিমন হোসেন ২০১১ সালে র‍্যাবের গুলিতে পা হারান
  • পরে লিমনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে র‍্যাব।
  • দুটি মামলা থেকে অব্যাহতিও পান লিমন।
  • লিমন বর্তমানে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র
  • হামলার প্রতিবাদ করায় লিমনের হাত ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

১০-১২ জন দুর্বৃত্ত যখন খিস্তিখেউড় করতে করতে ছাত্রী হোস্টেলে ঢুকতে যাচ্ছিল, তখন সামনে গিয়ে দাঁড়ান র‍্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন হোসেন। তিনি বাধা দিয়ে বলেন, এটা মেয়েদের হোস্টেল, ভেতরে যাওয়া যাবে না। জবাবে তাঁর ডান কানের ওপর পড়ে কয়েকটি চড়। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে শরীরে পড়ে লাঠির বাড়ি।

ডান হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে লিমন এখন শুয়ে আছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের একটি কেবিনে। লাঠির বাড়িতে সেদিন তাঁর হাতে চিড় ধরে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর সুস্থ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

গত শুক্রবার সকালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ‘পিএইচএ ভবনে’ ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় একদল দুর্বৃত্ত। একপর্যায়ে তারা হোস্টেল থেকে ছাত্রীদের বের করে দিতে গেলে লিমনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অভিযোগ, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ‘কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেডের’ মালিক কাজী মহিবুর রবের নির্দেশে দুর্বৃত্তরা এ হামলা চালায়।

ঝালকাঠির রাজাপুর ইউনিয়নের সাতুরিয়া গ্রামের লিমন হোসেন ২০১১ সালে মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে র‍্যাবের গুলিতে পা হারান। ‘সন্ত্রাসী’ সন্দেহে আটক করার পর তাঁর পায়ে গুলি করা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে র‍্যাব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২০১৩ সালে তাঁকে দুটি মামলা থেকেই অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেই লিমন বর্তমানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গণবিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলএমের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র।

পিএইচএ ভবন থেকে কিছুটা দূরে ‘ডক্টরস হোস্টেল’। গণস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে পড়ুয়া ছাত্রীরা সেখানে থাকেন।

লিমন প্রথম আলোকে বলেন, ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত হোস্টেলের সামনে কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেডের একটি ব্যানার লাগাচ্ছিল। এ সময় তিন-চারজন মেয়ে ক্লাস শেষে তাঁদের কক্ষে ফিরছিলেন। তাঁদের দেখে বিশ্রী ভাষায় কথা বলতে শুরু করে দুর্বৃত্তরা। মেয়েরা হোস্টেলের ভেতরে ঢুকে গেলে তারাও পিছু নেয়। তখনই তিনি সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর তাঁকে মারপিট করা হয়। কিছুক্ষণ পর এক শিক্ষক এসে তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

লিমনকে যখন মারধর করা হয়, তখন সকাল দশটা ছুঁইছুঁই। এর আগে দুর্বৃত্তরা পিএইচএ ভবন থেকে বিভিন্ন মালামাল সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। লিমন বলেন, পিএইচএ ভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি নিজের মুঠোফোনে লুটপাটের দৃশ্যটি কৌশলে ধারণ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা বিষয়টি টের পেয়ে গেলে তাঁকে ঘিরে ধরে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মুঠোফোন নিয়ে নেয়।