৭ দফায় না হলে বিকল্প ক্ষেত্র প্রস্তুতের আশা

সাত দফা ও ১১ লক্ষ্য নিয়ে কথা বলার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও আওয়ামী লীগ থেকে বলা হচ্ছে ঐক্যফ্রন্টের দফাগুলো মানার মতো নয়। তবে শেষ পর্যন্ত সংলাপ হতে যাওয়ায় ঐক্যফ্রন্ট অনড় না থেকে খোলা মনে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোর নেতারা মনে করছেন সংলাপের টেবিলে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য ৭ দফা বা অন্য কোনো বিকল্প ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। 

গত ১৩ অক্টোবর গণফোরাম, বিএনপি, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। এ জোট হওয়ার পর একাধিক বৈঠক করেছেন নেতারা। সিলেটে ২৪ অক্টোবর ও চট্টগ্রামে ২৭ অক্টোবর সমাবেশও করে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল এবং সবাই বলছিল আলোচনার চেষ্টা করতে। তারাও সাড়া দিয়েছে। উভয় পক্ষই মনে হয় চাচ্ছে একটা কিছু হোক। সাত দফা ছাড়াও অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা হতে পারে। বারবার যেন বসতে না হয়, কোনো ঝামেলা যাতে না হয় সেভাবেই আলোচনা হতে পারে।’ দাবির বিষয়ে সমঝোতা প্রসঙ্গে মন্টু বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে সমঝোতার জন্য সবাই আমরা উদ্যোগী। একদম গ্রহণযোগ্য না হলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব শর্ত আমরা দিয়েছি। সেসবের ক্ষেত্র যদি প্রস্তুত না হয় তাহলে বিকল্প কোনো ক্ষেত্র যদি প্রস্তুত করে দিতে পারে। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে এমন যেকোনো কিছু অবশ্যই আমরা মেনে নেব।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি, সংসদ বাতিলসহ কয়েকটি দাবি প্রসঙ্গে সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান কেমন হতে পারে-সে বিষয়ে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মন্টু জানান, অবস্থা বুঝে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন।

ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা বলেন, সাত দফার একটি বাদে প্রায় সবগুলোই বিবেচনা করার মতো। তবে এখানে ঐক্যফ্রন্টের পাশাপাশি বিএনপিরও গণতান্ত্রিক মনোভাব থাকতে হবে। বিএনপিকেও এ সংলাপে নিজেদের প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে। দেশের স্বার্থে যেসব বিষয়ে সমঝোতা সম্ভব সেগুলোতে একমত হতে হবে। তবে সরকারের কাছে নিজেদের দাবি দাওয়া আরও আগেই তুলে ধরা উচিত ছিল বলে মনে করেন ওই নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই সদস্য বলেন, সংলাপ চেয়ে চিঠি দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকে দ্রুত সাড়া পেয়েছেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও আলোচনা করেছেন। তাঁর গণতান্ত্রিক মনোভাব রয়েছে এবং তিনি রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু অনেক আগে থেকেই ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। জোটের এই নেতা বলেন, ‘টেবিলে বসে শুধু কমিটি করলে হবে না। আলোচনার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সেখানেই সমাধান হয়। দাবি যেমন থাকে. দাবির বিকল্পও থাকে ।’

ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, বিএনপিসহ সব দলকে খোলা মনে আলোচনা করতে অনুরোধ করা হয়েছে। সুযোগের কোনো কিছু যেন ঐক্যফ্রন্টের মনোভাবের কারণে নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো একমত হয়েছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির দুজন নেতা বলেছেন, সংলাপের আগে তারা কিছু বলতে চান না। এটা ঠিক ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণ গ্রহণ না করে বিএনপি যে ভুল করেছিল সেই ভুল দলটি এবার করতে চায় না। সংলাপ সফল হোক বা না হোক এর দায় যেন বিএনপির ওপর না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। জনগণের কাছে তারা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে সতর্ক থাকবে।

অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ রয়েছে। এই সংলাপে আওয়ামী লীগ কতটুকু আন্তরিক, সংলাপ কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা জনগণ বুঝতে পারছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা’ মামলায় সাজা ও সাজার মেয়াদ বাড়ানোর কারণে সংলাপ সফলতা নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ঐক্যফ্রন্টের সাত দফাকে আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রীরা অসাংবিধানিক ও মানা সম্ভব নয় বলে আসছেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ঐক্যফ্রন্টকে পাঠানো চিঠিতেও বলা হয়েছে, সংবিধানসম্মত সব বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত। এ ছাড়া ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে যাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানিয়ে আসছে।

গত ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপে বসার জন্য আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং সাধারণ সম্পাদক বরাবর দুটি চিঠি দেওয়া হয়। ঐক্যফ্রন্টের আহ্বানে সংলাপে বসার ক্ষেত্রে দ্রুতই সাড়া দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপে বসতে রাজি হয়েছেন। আওয়ামী লীগ থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ সংলাপে নেতৃত্বে দেবেন। আজ মঙ্গলবার সকালে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রধানমন্ত্রীর এই চিঠি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বাসায় গিয়ে তাঁর হাতে চিঠি পৌঁছে দেন।

আগামী সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা হতে পারে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোট হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সে ব্যাপারে সরাসরি কিছু না বললে জোটগতভাবেই অংশ নেওয়ার কথা ভাবছেন নেতারা। এ জোটের এক নেতা জানান, ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে নির্বাচনের জন্য। এই জোট নির্বাচনে যাবে। সেভাবেই এগোচ্ছে। আর সরকারের তরফ থেকেও জোটকে নির্বাচনমুখী করতে হবে। নয়তো সরকারেরই বদনাম হবে। তবে ওই নেতা জানান, সবার চোখই এখন সংলাপের দিকে। আলোচনার ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করবে।

ঐক্যফ্রন্টের নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, জোট নির্বাচন কেন্দ্রিক। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হলে তখন সিদ্ধান্ত হবে নির্বাচনের যাওয়ার ব্যাপারে। সেটা জোটগতভাবে বা আলাদাভাবেও হতে পারে।