পিডিবির সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

প্রায় ২৫ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মু. শহীদুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার কমিশন অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেয়।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শিগগিরই বিচারিক আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেবেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। গত বছরের ২৫ অক্টোবর রাজধানীর রমনা মডেল থানায় দুদকের উপপরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞা এই মামলা করেন। তিনিই মামলাটির তদন্ত করেন।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, শহীদুল আলম পিডিবির সহকারী প্রকৌশলী থেকে প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধানের সময় তাঁকে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ দিলে তিনি সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিবরণী জমা দেন। 

তদন্তে দেখা গেছে, আসামি মু. শহীদুল আলম ১৯৮৭-৮৮ করবর্ষ থেকে তাঁর আয়কর নথি চালু করেন। দুদক ও আয়কর বিভাগে জমা দেওয়া সম্পদের বিবরণীতে তাঁর নিজের নামে কোনো স্থাবর সম্পত্তির তথ্য উল্লেখ করেননি। শুধু অস্থাবর সম্পদ অংশে তিনি মোট ২৬ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯ টাকার সম্পদ উল্লেখ করেছেন। অথচ তাঁর গৃহিণী স্ত্রী শামিমা আলমের নামে গুলশানে কেনা ফ্ল্যাটের দাম ১ কোটি ৪৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৯৫। ওই ফ্ল্যাট কেনার সময় ২৪ লাখ ৪২ হাজার ৪৯৫ টাকা শহীদুল আলমের ব্যাংক হিসাব থেকে সরাসরি পরিশোধ করা হয়েছে। মামলার তদন্তে দেখা গেছে, শহীদুল আলম অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়েই স্ত্রী শামিমা আলমের নামে ওই সম্পদ অর্জন করেছেন।

অর্থ পাচার মামলার তদন্ত চলছে:
গত বছরের ২৫ অক্টোবর রাজধানীর কলাবাগান থানায় শহীদুল আলমের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছিলেন দুদকের একই কর্মকর্তা। ওই মামলায় ঘুষের মাধ্যমে অর্জিত ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৪৫০ টাকা ‘অস্বাভাবিক লেনদেন এবং স্থানান্তরের’ অভিযোগ আনা হয়। মামলার তদন্ত এখনো চলছে।

ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, শহীদুল আলম অবৈধ টাকার উৎস গোপন করতে ঢাকায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে তাঁর নামে সঞ্চয়ী হিসাব খুলে ২০০২ সালের ৯ জুলাই থেকে ২০০৫ সালের ২০ মার্চের মধ্যে ১ কোটি ৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা জমা করে পরে তুলে নেন।

এ ছাড়া যমুনা ব্যাংকের সোনারগাঁ রোড শাখায় সঞ্চয়ী হিসাবে ২০০৪ সালের ২৩ মার্চ থেকে ২০০৪ সালের ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা করেন শহীদুল। একই শাখাতে এসটিডি হিসাবে ২০০৪ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে ২০০৭ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ভুয়া ব্যক্তি সাজিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৪টি এফডিআরের মাধ্যমে ওই অর্থ কৌশলে পাচার করেন।

অন্যদিকে সাউথইস্ট ব্যাংকের নিউ ইস্কাটন শাখায় শহীদুল আলম নিজের সরকারি কর্মকর্তার পরিচয় গোপন করে প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ার পরিচয়ে সঞ্চয়ী হিসাব খুলে ২০০৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ৭৯ লাখ ১৬ হাজার ৪৫০ টাকা জমা করেন বলে এজাহারে বলা হয়েছে।

পরে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করেন তিনি। নিজ নামে এবং ভুয়া ব্যক্তি সাজিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১২টি এফডিআরের মাধ্যমে তিনি ওই টাকা স্থানান্তর করেন। দুদক সূত্র জানিয়েছে, ওই মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই এর অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হতে পারে।