ক্ষমতা ৬০-৪০ ভাগাভাগির সংলাপ যেন না হয়: সেলিম

অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল বের করা হয়। তোপখানা রোড, ঢাকা, ৩০ অক্টোবর। ছবি: আবদুস সালাম
অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল বের করা হয়। তোপখানা রোড, ঢাকা, ৩০ অক্টোবর। ছবি: আবদুস সালাম

ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংলাপে বসার খবরকে ইতিবাচক বলছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তারা বলছে, সংলাপ যেন কেবল ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য না হয়। সংলাপ হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও জনগনের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির দাবিতে আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাম জোটের নেতারা এ কথা বলেন। বক্তারা বলেন, বাম জোটকে সংলাপে ডাকা হলে আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ ছিল।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া, বর্তমান সরকার পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন, জনগণের আস্থাহীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

সমাবেশে রাষ্ট্রপতিকে জাতির অভিভাবক উল্লেখ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক চলমান সঙ্কটের প্রতি দিক নির্দেশ করে বাম জোটের নেতারা দেশপ্রেম ও নৈতিক ক্ষমতা বলে দেশের এই ‘গভীর সঙ্কট’ উত্তরণে অবিলম্বে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, দেশের এই ‘ক্রান্তিকালে’ রাষ্ট্রপতির যুক্তিযুক্ত বলিষ্ঠ ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম ও সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য বয়ে আনতে পারে।

সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই দুই পক্ষের ‘ক্ষমতা ৬০-৪০ ভাগাভাগির সংলাপ যেন না হয়, সংলাপ হতে হবে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার যে সংলাপ হচ্ছে সেটা একটা ভালো পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আলোচনা করলে আমাদের যে আরও অতিরিক্ত দাবি আছে সেগুলোও আলোচনার সুযোগ হত। কিন্তু আলাপের জন্য আলাদা করে বেছে নিয়েছে তাদের, ভাল কথা করেন। আমরা সতর্ক দৃষ্টিতে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছি, কারণ সংলাপের নানান নমুনা আছে।’

সিপিবি নেতা অতীতে সংলাপের নামে দুটি ছাত্র সংগঠনের ভাগাভাগির বিষয়টিও তুলে আনেন। তিনি বলেন, সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের মধ্যে গোলাগুলির পর সংলাপের নামে দুই ছাত্র সংগঠনের নেতারা ভাগাভাগির মাধ্যমে ‘সমাধান’ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংলাপে ছাড় দিতে হবে। তিনি যদি কেবর বলেন, সংবিধানে নেই তাই আলোচনা হবে না তাহলে সংলাপ সফল হবে না। সংবিধানে সংবিধান সংশোধনের বিধান আছে। সংবিধান সংশোধন করে সংকটের সমাধান করা যায়।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন নির্বাচনকালীন সরকার হবে। সেই সরকার কেবল দৈনন্দিন কাজ করবে। তিনি এটা যদি সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হয় তাহলে এখনই সংবিধান সংশোধন করে তা সংযোজন করা উচিত। এজন্য দুদিনের মধ্যে সংসদ অধিবেশন ডাকার আহ্বানও জানান তিনি। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যে কোনো প্রতিকূলতার মধ্যে তাঁরা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সেটা নির্বাচন বর্জন হোক, বা অংশগ্রহণ করে হোক। বাম গণতান্ত্রিক জোট সংগ্রাম থেকে পিছপা হবে না।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, সংলাপ যেন লোক দেখানো না হয়। তিনি আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকরী ব্যবস্থান নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তা না হলে নভেম্বর থেকে বাম জোট নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদার করবে।

সমাবেশে সিপিবির বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমল্ডীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক প্রমুখ বক্তব্য দেন। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সমাবেশে উপস্থিত ছিলে।

সমাবেশের পরে জোট মিছিল নিয়ে বঙ্গভবনের দিকে যেতে থাকলে পুলিশ তাদের দৈনিক বাংলা মোড়ে আটকে দেয়। সেখান থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির বরাবর একটি স্বারকলিপি বঙ্গভবনে পৌঁছে দেন।