শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি সংরক্ষণ হবে

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা হবে। এ জন্য ৪৬১ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সারা দেশের এমন প্রায় ২০ হাজার সমাধিস্থল এই প্রকল্পের আওতায় আসবে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই সংক্রান্ত প্রকল্প পাস করা হয়। শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

এই প্রকল্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল অরক্ষিত অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব সমাধিস্থল যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের জুলাই মাস শুরু হয়ে ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি সম্পর্কে একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। এসব সমাধিস্থলে শহীদদের নাম থাকবে। আবার যাদের নাম অজানা থাকবে, তাঁদের কথাও থাকবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ অনুযায়ী, যেসব গণকবর আছে, সেসবও এই প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন করা হবে।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি যুদ্ধ করেছি। কিন্তু আমি সনদ নিইনি। আমার মতো অনেকেই নেয়নি। এখন সার্টিফিকেট একটি ব্যবসা হয়ে গেছে, পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

এই প্রকল্পটিসহ একনেক সভায় মোট ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্প পাস করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে মোট খরচ হবে ২৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশজ উৎস থেকে দেওয়া হবে ১৯ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। বিদেশি সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৫ হাজার ৭২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা দেবে ৩০৬ কোটি টাকা।

অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো
১ হাজার ২৭২ কোটি ২৯ লাখ টাকার প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ এবং কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন, ৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত নতুন দ্বৈতগেজ রেলপথ নির্মাণ, ১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকার ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ, ১ হাজার ৫১০ কোটি টাকার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৫ নম্বর জোনের অভ্যন্তরীণ রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ, ৬৯৫ কোটি টাকার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা, ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকার মাদানি অ্যাভিনিউ থেকে বালু নদ পর্যন্ত প্রশস্ত করা এবং বালু নদ থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ, ৪২১ কোটি টাকার বাংলাদেশ সচিবালয়ে ২০তলা নতুন অফিস ভবন নির্মাণ, ৭৯৮ কোটি টাকার তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ, ৪৫৭ কোটি টাকার রাজউক পূর্বাচল ৩০০ ফুট মহাসড়ক থেকে মাদানি অ্যাভিনিউ-সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ৪৮০ কোটি টাকার ডাক অধিদপ্তরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, ৯২৭ কোটি টাকার বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য নয়টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ, ৪২২ কোটি টাকার ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ, ১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা, ৬৫৫ কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর নির্মাণ, ৩ হাজার ৬৯১ কোটি টাকার ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন, ৪৩৫ কোটি টাকার নয়টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন, ৩৫৮ কোটি টাকার চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিএনএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ, ৭৮০ কোটি টাকার স্মলহোল্ডার অ্যাগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রকল্প, ১১৮ কোটি টাকার কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোর কার্যক্রম শক্তিশালী করা, ২০২ কোটি টাকার ঢাকায় বিসিক কেমিক্যাল পল্লি স্থাপন, ৬৯ কোটি টাকার গাজী ওয়্যারস লিমিটেডকে শক্তিশালী ও আধুনিক করা, ১৭০ কোটি টাকার ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট এলএনজি বেইজড কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি করা, গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও ১ হাজার ৫৮ কোটি টাকার জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি সেক্টর প্রকল্প।