সার কালোবাজারির অভিযোগে দুজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

১৫৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকারও বেশি মূল্যের প্রায় ৫২ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন সরকারি সার কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বগুড়ার সান্তাহার বাফার গুদামের সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) মো. নবীর উদ্দিন খান (উপপ্রধান প্রকৌশলী, যান্ত্রিক) ও শ্রমিক লীগ নেতা মো. রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়েছে।

আজ বুধবার দুদকের বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে আদমদীঘি থানায় এ মামলা করেন। রাশেদুল ইসলাম আদমদীঘি উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীন সান্তাহার বাফার গুদাম। দেশে কৃষকদের জন্য সার উৎপাদনের পাশাপাশি ঘাটতি পূরণে সার আমদানি করে থাকে বিসিআইসি। দেশের ২৪টি বাফার গুদামে এসব সার সংরক্ষণ করা হয়। আমদানি করা সার গুদাম পর্যন্ত পরিবহন করা হয় বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কিন্তু সার পরিবহনের সময় নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে দুদক।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বিসিআইসি ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদেশ থেকে আমদানি করা ইউরিয়া সার, বিসিআইসির নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত কাফকো (চট্টগ্রাম ফার্টিলাইজার কোম্পানি) ও এসএফসিএল (শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি) ইউরিয়া সার বিভিন্ন বাফার গুদামে পরিবহনের জন্য ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র প্রকাশ করা হয়। সে মোতাবেক মেসার্স পোটন ট্রেডার্স, মেসার্স বাল্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, মেসার্স নবাব অ্যান্ড কোম্পানি, মেসার্স রেক্স মোটরস ও মেসার্স গ্রামসিকো লিমিটেডকে পরিবহন ঠিকাদার হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে তাদের সঙ্গে বিসিআইসি একটি চুক্তিও করে। এই পরিবহনের মাধ্যমে সরবরাহ করা ইউরিয়া সারের ট্রাক চালান ও সরবরাহ চালানে স্বাক্ষর করে তা প্রাপ্তি স্বীকার করেন নবীর।

বাফার গুদামের সহকারী হিসাব কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান সারপ্রাপ্তির তারিখেই সান্তাহার বাফারে ব্যবহৃত প্রাপ্তি, সরবরাহ রেজিস্ট্রারে পরিবহন ঠিকাদারভিত্তিক বিভিন্ন সারের ব্র্যান্ড, প্রাপ্ত সারের পরিমাণ, বিতরণ করা সারের পরিমাণ, মোট প্রাপ্ত সারের পরিমাণ মূল লগ বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়। একই সঙ্গে সারপ্রাপ্তি ও বিতরণের তথ্য ইন্টারনেটের সেন্ডিং রেজিস্ট্রারে হিসাবভুক্ত করা হয়। এই তথ্য প্রতিদিন মুঠোফোনের খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে বিসিআইসির প্রধান কার্যালয়কে অবহিত করা হয়। সান্তাহার বাফারে প্রতি মাসে সারপ্রাপ্তি ও বিতরণের মাসিক তথ্য লিখিতভাবে বিসিআইসির বিপণন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়। নিযুক্ত পরিবহন ঠিকাদার সার সরবরাহের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা (ইনচার্জ) ও সহকারী হিসাব কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে প্রাপ্ত সারের বরাদ্দ আদেশভিত্তিক সরবরাহ চালান মোতাবেক পণ্য প্রাপ্তির প্রতিবেদন (এমআরএ) পরিবহন ঠিকাদারের কাছে ইস্যু করা হয়।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পরিবহন ঠিকাদারি ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোট ৬৮ হাজার ৮২২ দশমিক ৪৯৪ মেট্রিক টন সার সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৫২ হাজার ৩৪২ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন সার নবীর উদ্দিন ও রাশেদুল ইসলাম কালোবাজারে বিক্রি করে দেন। বিক্রি করা এই সারের সরকারি মূল্য ১৫৩ কোটি ৩৬ লাখ ১৩ হাজার ৭৫৩ টাকা। নবীর উদ্দিন ও রাশেদুল ইসলাম পারস্পরিক যোগসাজশে ব্যক্তিস্বার্থে আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি অর্থের ক্ষতি সাধন করেছেন। এ অপরাধের অভিযোগে নবীর ও রাশেদুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা করা হয়েছে।

বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (দুদক) উপপরিচালক আনোয়ারুল হক বলেন, বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে ওই সারগুদামে অনুসন্ধান চালায় দুদক। তদন্তে সরকারি সার কালোবাজারির প্রমাণ পাওয়া যায়। নবীর উদ্দিন ও রাশেদুল মিলে ১৫৩ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সার কালোবাজারি করেছেন। বিষয়টি তদন্তে উঠে আসার পর আজ আদমদীঘি থানার তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি অসুস্থ ছিলাম। রাজনীতি করি বলে প্রতিপক্ষের অভাব নেই। এই কারণে মামলায় জড়ানো হয়েছে। বিষয়টি আইনগতভাবেই মোকাবিলা করা হবে।’