নাশকতার মামলায় ঢাকায় গ্রেপ্তার ৬৪, রিমান্ডে ১৫

নাশকতা ও সরকারিকাজে বাধা দেওয়ার মামলায় ঢাকায় ৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল মঙ্গলবার তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বুধবার এঁদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

আদালত ও পুলিশ সূত্র বলছে, ঢাকা মহানগরের ৪১টি মামলায় ২৮টি থানার পুলিশ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে দায়ের করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সরকারিকাজে বাধার অভিযোগ, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং বিস্ফোরক আইনে এসব মামলা করা হয়।

বিএনপির সহ–আইনবিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, নাশকতার অভিযোগে ঢাকায় গতকাল যাঁদের যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা বিএনপির নেতা–কর্মী। আজ তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়।

এদিকে গতকাল ঢাকায় পুলিশের কাজে বাধা, রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল, ক্যান্টনমেন্ট এবং খিলক্ষেত থানায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৮৮ জন নেতা–কর্মীর নামে নতুন মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে মতিঝিল থানা-পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ৫ জনকে। খিলক্ষেত এবং ক্যান্টনমেন্ট থানা-পুলিশ একজন করে আসামি গ্রেপ্তার করেছে।

খিলক্ষেতে ককটেল বিস্ফোরণ
বিএনপির ৮৬ জন নেতা–কর্মীর নাম উল্লেখ করে গতকাল খিলক্ষেত থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলায় বলা হয়, খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির বিক্ষোভ উপলক্ষে খিলক্ষেতের কুড়াতলী পুলিশ বক্সের দক্ষিণ পাশের রাস্তায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা–কর্মীরা জড়ো হন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার জন্য বিএনপির নেতা–কর্মীদের প্ররোচনায় নাশকতা ও আন্দোলন করার পরিকল্পনা করার জন্য তাঁরা একত্র হন।

এজাহারে বলা হয়, ‘ঘটনাস্থলে আসামিদের রেখে যাওয়া পাঁচটি বিস্ফোরিত ককটেল/ জর্দার কৌটার অংশবিশেষ, যা লাল স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল। যা সাক্ষীদের সামনে থেকে জব্দ করা হয়।’
জব্দ তালিকার সাক্ষী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সেখানে বিএনপির নেতা–কর্মীরা মিছিল বের করেছিলেন তবে সেখানে কোনো ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনা তিনি দেখেননি। ককটেল উদ্ধার করতে দেখেননি তিনি।

তবে মামলার বাদী খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামি ইমরান খানকে আদালতে হাজির করে পুলিশ পাঁচ দিন রিমান্ড চাইলে আদালত তাঁকে দুই দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, বিএনপির নেতা–কর্মীরা পুলিশের কাজে বাধা দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। আসামি ইমরান তা স্বীকার করেছেন।

ইটপাটকেল নিক্ষেপ
ক্যান্টনমেন্ট থানা-পুলিশ বিএনপির ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে। মামলায় পুলিশ বলছে, ক্যান্টনমেন্ট থানার কালশী রোডে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি ও জামায়াত–শিবিরের ক্যাডাররা জড়ো হয়। রাস্তার যান চলাচল বন্ধ করে লাঠি ও ইট দিয়ে যানবাহন ভাঙচুর করে, লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি করে। ঘটনাস্থল থেকে কবির নামের একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কবিরকে আদালতে হাজির করে পুলিশ সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মতিঝিলে গাড়ি ভাঙচুর
গাড়ি ভাঙচুর ও সরকারিকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির ৫৪ জন নেতা–কর্মীর নামে মামলা করেছে মতিঝিল থানার পুলিশ। মামলায় বলা হয়েছে, গতকাল দুপুরে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা মতিঝিল থানার ১ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার জনতা ব্যাংক লোকাল অফিসের সামনে জড়ো হন। এরপর তাঁরা রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেন। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ না করতে অনুরোধ করলে রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর করেন। পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৪টি ইটের টুকরা, ৯ টুকরা গাড়ির গ্লাসের অংশবিশেষ, ৫টি বাঁশের লাঠি আলামত হিসেবে জব্দ করে।

ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার পাঁচ আসামি হলেন ফজলুল হক বাবু, আজম উদ্দিন, সিরাজ উদ্দিন, ময়জ উদ্দিন ও সাদেক হোসেন।
আজ পাঁচজনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।