সংলাপ লোভ দেখানো, ফাঁদে ফেলার: বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার গণভবনে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে আজ সকাল ১০টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত গণ-অনশন করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আজকের কর্মসূচিতে বিএনপির নেতারা বলেছেন, লোভ দেখানো ও ফাঁদে ফেলার সংলাপ আজ। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপি নেতারা বলেন, একদিকে সংলাপ, অপরদিকে গ্রেপ্তার—এগুলো ভালো আলামত মনে হয় না। ফাঁদে ফেলবেন, ধোঁকা দেবেন? সেটা হবে না।

বিএনপির আজকের গণ-অনশন কর্মসূচিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না ও আবদুল মালেক রতন সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। এর আগে বিএনপির নেতারা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালতের দেওয়া রায়ের সমালোচনা করেন। বিএনপি নেতারা অবিলম্বে দলীয় দুই প্রধানের সাজা বাতিল করে ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া সাত দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।

বিকেল তিনটা ১৫ মিনিটে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমেদ।

গণ-অনশন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মহানগর নাট্যমঞ্চের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও দেখা গেছে।

আজকের কর্মসূচির প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, লোভ দেখানো ও আমাদের ফাঁদে ফেলার সংলাপ। আপনাদেরকে 'আওয়ামী লীগ' চিনি। ফাঁদে ফেলবেন, ধোঁকা দেবেন। আর সেটা হবে না। আমাদের ৭ দফা দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচন হতে হবে। ৭ দফা দাবি মানা না হলে, আগামী নির্বাচন হবে না এবং হতে দেওয়া হবে না। এ জন্য কঠোর কর্মসূচির জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, দেশের জনগণের দাবি সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হতে হবে। এটা শুধু জনগণের নয়, বন্ধুরাষ্ট্রগুলো একযোগে বলছে, সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হতে হবে। এর জন্য আমরা ১১ দফা দাবি দিয়েছি। প্রথম দফা দাবিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলেছি। খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, সংলাপে সাত দফা দাবির বাস্তবায়ন ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না। সংলাপে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান না হলে রাজপথে আন্দোলনের কথাও বলেন তিনি।

গণ-অনশন কর্মসূচির সভাপতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বন্ধুগণ আমরা মাথা নত করব না, আমরা আমাদের অধিকার আন্দোলন ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আদায় করব। আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার, ১৯৭১ সালের যে চেতনা নিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলাম, সেই অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করবই করব। তিনি বলেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণে এখন বিচার ব্যবস্থা চলছে। তার প্রমাণ গত দুই দিনে খালেদা জিয়ার মামলার রায়ে সাজা বেড়ে যাওয়ার ঘটনা। সরকার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে, দেশের বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থাকেও তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে দেশ আর গণতান্ত্রিক দেশ নাই, স্বৈরতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, গণতন্ত্র মানেই খালেদা জিয়া। তাই আজকে তাঁর মুক্তির দাবিতে অনশন করছি। খালেদা জিয়াকে যখন বলা হলো-আপনার সাজা বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন তিনি বলেছিলেন তারা যত সাজা দিতে চায় দিক, আমি মাথা নত করব না। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করার জন্য আহ্বান জানান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ গণ-অনশনে বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আরও জোরদার করতে হবে। এই ঐক্যের পক্ষে সারা দেশের মানুষ আজ একত্র হয়েছে। বিরাট আশা নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট এগিয়ে যাচ্ছে। আশা হলো একটা নির্বাচন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হবে। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে।

কর্মসূচিতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জনগণের চাপে, বন্ধুদের চাপে সংলাপ ডাকতে বাধ্য হয়েছে। ইতিহাস বলে এই সব নির্যাতন করে, পাঁচ বছরের সাজাকে ১০ বছর করে, আর নতুন সাজা সাত বছর চাপিয়ে দিয়ে কিছুই করা যাবে না। সাত দিনের মধ্যে ধুলোর মতো সব উড়ে যাবে। তিনি বলেন, যা-ই হোক, সবকিছুর বিরুদ্ধে খুবই দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে, তা আরও দৃঢ় করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সংলাপ নিয়ে ধান্দা হবে, বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে, মানুষকে দেখাবে যে দেখো ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ করেছি, কথা বলেছি আরেক দলের সঙ্গে, ওই দলের সঙ্গে, কথা বলেছি ডানের সঙ্গে-বামের সঙ্গে, তারপরে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে জেলের মধ্যে খালেদা জিয়াকে রেখে নির্বাচন করবে—এই সব ধান্দাবাজি চলবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আহমদ আযম খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নাল আবেদীন, আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শামা ওবায়েদ, এমরান সালেহ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীসহ দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।