নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার ৭৯, রিমান্ডে ৫৬

প্রিজন ভ্যানে বাবা নজরুলকে দেখে কেঁদে উঠল ছোট্ট শিশু নুর নাহার। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মা আলেয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘মা, বাবা আজ বাড়ি যাবে তো?’ এমন সময় হুইসেল বাজিয়ে গাড়িটি ঢাকার আদালতের সামনে থেকে ঢুকে গেল হাজতখানায়।

নজরুলের স্ত্রী আলেয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামী গাড়িচালক। রাজনীতি করেন না। থাকেন মিরপুরে। অথচ পুলিশ ওয়ারী থানায় রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে গত মঙ্গলবার।

আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যানে বাবাকে দেখে চোখের জল ফেলছে নূরুন নাহার ও তার মা আলেয়া বেগম। ‘পুলিশ বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে শুনে গতকাল থেকে কিছুই খায়নি মেয়ে’ আক্ষেপ করে বলছিলেন আলেয়া। মিরপুরবাসী চালক নজরুল ইসলামকে ওয়ারী থানা থেকে রাজনৈতিক মামলা দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হচ্ছে। সিএমএম কোর্ট, ১ নভেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার
আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যানে বাবাকে দেখে চোখের জল ফেলছে নূরুন নাহার ও তার মা আলেয়া বেগম। ‘পুলিশ বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে শুনে গতকাল থেকে কিছুই খায়নি মেয়ে’ আক্ষেপ করে বলছিলেন আলেয়া। মিরপুরবাসী চালক নজরুল ইসলামকে ওয়ারী থানা থেকে রাজনৈতিক মামলা দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হচ্ছে। সিএমএম কোর্ট, ১ নভেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার

মামলার কাগজপত্র থেকে জানা যায়, নজরুলকে গত ৩১ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, নজরুল বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের সদস্য। নজরুল নাশকতা করার জন্য পরিকল্পনা করেছিল। নজরুলকে তিন দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

হাতিরঝিল থানার মামলায় গ্রেপ্তার শামসুদ্দিন আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। শামসুদ্দিন বলেন, সিরামিকের ব্যবসা করেন। রাজনীতি করেন না। অথচ পুলিশ রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। ছেলের আজ (গতকাল) পরীক্ষা। অথচ রাতেই পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে এসেছে। স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ১৩ অক্টোবর করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় শামসুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাতিরঝিল থানা-পুলিশ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, শামসুদ্দিনসহ অন্যরা আল বারাকা মোটরসের সামনের পাকা রাস্তার ওপর একত্র হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। সেখানে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। আদালত শামসুদ্দিনের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। ছবি: আসাদুজ্জামান।
আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। ছবি: আসাদুজ্জামান।

ঢাকার আদালত এবং পুলিশ সূত্র বলছে, আজ বৃহস্পতিবার ৪৯টি মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৭৯ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এর মধ্যে ৫৬ জন আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত অনুমতি দিয়েছেন। ঢাকা মহানগরের ৩১টি থানা–পুলিশ এসব আসামিকে গ্রেপ্তার করে আজ আদালতে পাঠায়। গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং গতকাল করা মামলায় এসব আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা, রাস্তায় যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো, নাশকতার পরিকল্পনা করা ও অন্তর্ঘাতমূলক কাজের অভিযোগ আনা হয়েছে। দণ্ডবিধির পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক আইনে পুলিশ এসব মামলা করেছে।

হাতিরঝিল থানার মামলায় গ্রেপ্তার শামসুদ্দিন। ছবি : আসাদুজ্জামান
হাতিরঝিল থানার মামলায় গ্রেপ্তার শামসুদ্দিন। ছবি : আসাদুজ্জামান

গ্রেপ্তার আসামিদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা আদালতকে লিখিতভাবে বলেছেন, হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলায় তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে। আসামিদের কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। আদালতে দেখা যায়, দুপুরের পর থেকে আদালতে ভিড় করতে থাকেন গ্রেপ্তার বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের স্বজনেরা। দুপুরের দিকে প্রিজন ভ্যানে করে আসামিদের আদালতের সামনে আনার পর তাঁদের দেখে অনেককে কাঁদতে দেখা যায়।

গ্রেপ্তার গাড়িচালক নজরুল। ছবি: আসাদুজ্জামান
গ্রেপ্তার গাড়িচালক নজরুল। ছবি: আসাদুজ্জামান

রমনা থানায় নতুন মামলা
বুধবার সেগুনবাগিচা এলাকায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ রমনা থানায় আজ মামলা করেছে। মামলায় বলা হয়েছে, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের কাছে বটতলার পাশের রাস্তায় লোহার রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে বেআইনি সমাবেশ করে রাস্তায় যান চলাচলে বাধা দেন। সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ মামলায় গুলশান থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দীন ইসলামসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে আজ আদালতে পাঠায় পুলিশ। পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। ছবি: আসাদুজ্জামান।
আসামিদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। ছবি: আসাদুজ্জামান।