সন্তুষ্ট নই: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি:প্রথম আলো
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি:প্রথম আলো

সংলাপে সন্তুষ্ট নন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার রাতে সংলাপ শেষে গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

সংলাপ শেষে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। সংলাপে সন্তুষ্ট কি না, সংলাপে কি কি হলো—সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সন্তুষ্ট নই। আর কোনো কথা তিনি বলেননি।

সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের ২৩ নেতার সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২১ নেতা। রাত সাড়ে ১০ পর্যন্ত সংলাপ চলে। এরপরই সংলাপে অংশ নেওয়া নেতারা একে একে বের হয়ে যান।

ঐক্যফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহের কথা জানিয়ে চিঠি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী তাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান। সেই আমন্ত্রণে ঐক্যফ্রন্ট গণভবনে সংলাপে গেলেও নৈশভোজে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে।

গণফোরাম, বিএনপি, জাসদ (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। গঠনের পরই ৭ দফা দাবি মানতে আন্দোলনে নামে তারা। তবে সংলাপের কারণে সেই আন্দোলনে কিছুটা ভাটা পড়েছে। ইতিমধ্যে ঐক্যফ্রন্ট সিলেট ও চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছে। কাল তাদের ঢাকায় সমাবেশ করার কথা আছে। এ ছাড়া ৬ নভেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশ করার কথা রয়েছে।

ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন ৭ দফার ভিত্তিতে সংলাপ হবে। ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি হলো:

১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
২. নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা দেওয়া।
৩. বাক্, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
৪. কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন, সামাজিক গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।
৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া।
৬. নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচনপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাঁদের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা।
৭. তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা এবং নতুন কোনো মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া।

সংলাপে যাঁরা ছিলেন

ঐক্যফ্রন্ট গণভবনে যাওয়ার জন্য ১৬ জন নেতার নাম জানান। পরে আজ এই জোট নতুন করে পাঁচ সদস্যের নামের তালিকা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠায়। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মহসীন মন্টু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সংলাপের জন্য সর্বমোট ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দল যোগদানের কথা বলা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সংলাপে যোগ দেননি।

নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া সদস্যরা হলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার আফ্রিক ও গণফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ও ম শফিক উল্লাহ।

এর আগে সংলাপে অংশ নিতে গত মঙ্গলবার ১৬ জনের প্রতিনিধি দলের নাম ঘোষণা করেছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ওই ১৬ জন হলেন– গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মহসীন মন্টু, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, সহসভাপতি তানিয়া রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এস এম আকরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আ ব ম মোস্তফা আমিন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই সংলাপে ১৪ দলীয় জোট থেকে ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল যোগ দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্যরা হলেন– আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, মো. আবদুর রাজ্জাক, কাজী জাফর উল্যাহ, আবদুল মতিন খসরু, রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাসদের একাংশের সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিকল্পধারা ও জাতীয় পার্টির নেতারা ২ ও ৫ নভেম্বর গণভবনে সংলাপে বসবেন। সব দলের সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাম দলগুলোকে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বাম দলগুলো তাদের সিদ্ধান্ত পরে জানাবে বলে জানিয়েছে।