বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমালোচনায় জাতিসংঘ

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ইউএনএইচসিআরকে বাদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে পাঠানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিচ বলেন, ‘শরণার্থীদের ব্যাপারে নেতৃত্বদানকারী ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে এ নিয়ে যে আলোচনা হয়নি, সেটা স্পষ্ট।’ যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম গার্ডিয়ান গত বুধবার এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করেছে।

তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘকে পাশ কাটানোর অভিযোগ ঠিক নয়। কারণ, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আগে তারা স্বেচ্ছায় ফিরতে চায় কি না, এটি নিশ্চিত করতে ইউএনএইচসিআরের কাজ করার কথা। এ নিয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সংস্থাটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফেরার বিষয়ে কাজ শুরুর অনুরোধ জানিয়ে সরকার গত ২৮ অক্টোবর জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে।

গত মঙ্গলবার ঢাকায় দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝিতে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে রাখাইনে পাঠানো শুরুর বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রাজি হয়েছে। পরদিন বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনার পর মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থুয়ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম দফায় প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত নেওয়া হবে।

এদিকে কক্সবাজারে কর্মরত জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বহিঃসম্পর্কবিষয়ক কর্মকর্তা ক্রিস মেলজারকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইউএনএইচসিআর কোনো পক্ষ নয়। প্রত্যাবাসন যাতে স্বেচ্ছায় আর টেকসই উপায়ে হয়, এই প্রেক্ষাপট থেকে কোনো সময়সীমা কিংবা শরণার্থীদের সংখ্যার বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়ার বিপক্ষে ইউএনএইচসিআর। তালিকা অনুযায়ী মিয়ানমার যেসব রোহিঙ্গাকে নিতে রাজি হয়েছে, তারা বিষয়টি জানে কি না, সেটি স্পষ্ট নয়। এটা তাদের (রোহিঙ্গা) জানা উচিত। তারা যদি ফিরে যেতে চায়, তাদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। তাড়াহুড়া করে কিংবা সময় হওয়ার আগে যাতে তাদের ফেরত পাঠানো না হয়, সেটা ঠিক করা জরুরি।

গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেনমার্কের উন্নয়ন সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী উলা পেডারসন টোরনায়েস এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলেকে জানিয়েছেন, প্রথম দফায় ৪৮৫টি পরিবারের ২ হাজার ২৬০ রোহিঙ্গা রাখাইনে ফিরে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমকে উদ্ধৃত করে বাসস এ তথ্য জানায়।

ঢাকা ও মিয়ানমারের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের দেওয়া ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ৬০০ জনকে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। ওই তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত ৫০০ পরিবারের গ্রামগুলো আংশিকভাবে হলেও অক্ষত রয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রথম দফায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সঙ্গে যুক্ত সরকারের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, প্রত্যাবাসনের তালিকায় যেসব রোহিঙ্গার নাম বিবেচনায় আসবে, তাদের তালিকা ইউএনএইচসিআরকে দেওয়া হবে। এরপর রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে ইউএনএইচসিআর।