মইনুলকে হাজির করা নিয়ে রংপুরে তুলকালাম

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন

রংপুরে মানহানির মামলায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের জামিন শুনানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে দিনভর ছিল উত্তেজনা। আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা মইনুলকে ঝাড়ু প্রদর্শনসহ স্যান্ডেল, জুতা ও ডিম নিক্ষেপ করেন। পরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।

আজ রোববার মানহানির মামলায় জামিন শুনানির জন্য অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মইনুলকে নেওয়া হলে এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।

এদিকে জামিন শুনানি শেষে বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মুক্তা মইনুলের জামিন নামঞ্জুর করেন। ২২ নভেম্বর মামলার শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল মালেক এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, ব্যারিস্টার মইনলুকে আদালতে হাজির করা হবে, এমন খবর জানাজানি হলে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আদালত চত্বরে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আদালত চত্বরে সমবেত হন। তাঁরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে মইনুলের বিপক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় থেমে থেমে আওয়ামী লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আদালত চত্বরে কয়েক দফা ঝাড়ু মিছিল বের করেন। মইনুল হোসেনকে আদালতে নেওয়ার আগে পুরো আদালত চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশের একটি সাদা গাড়িতে মইনুলকে আদালতে নেওয়া হয়। এ সময় সামনে-পেছনে পুলিশের গাড়ি ছিল। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকে গাড়ি দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ও মইনুল হোসেনকে লক্ষ্য করে ঝাড়ু প্রদর্শন করা হয়। এ সময় তাঁকে লক্ষ্য করে স্যান্ডেল, জুতা ও ডিম নিক্ষেপ করা হয়। মইনুলের মাথায় হেলমেট ছিল।

এদিকে মইনুলকে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। জামিনের শুনানি হয়। মইনুল হোসেনের পক্ষে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী আফতাব হোসেনসহ আরও অনেকে। শুনানি শেষে বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মুক্তা জানান পরে আদেশ দেওয়া হবে। এরপর বেলা দেড়টার দিকে আদালত থেকে মইনুলকে বের করে পুনরায় পুলিশের গাড়িতে ওঠানোর সময় আবারও তাঁর ওপর জুতা নিক্ষেপ করা হয়। আদালতের একপাশ থেকে মইনুলের পক্ষে খালেদা জিয়ার নামে বিএনপির কিছু কর্মী স্লোগান দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে দলের অনেক নেতা-কর্মী আদালতে উপস্থিত হওয়ায় বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়েছে।’

মহানগর বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মামলার হাজিরা দিতে আদালতে গিয়েছিলাম। পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে।’

গতকাল শনিবার বিকেলে মইনুলকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কারাগার থেকে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়। গত ২২ অক্টোবর মানবাধিকারকর্মী রংপুরের বাসিন্দা মিলি মায়া বেগম রংপুরের মুখ্য বিচারিক আদালতে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মানাহানির মামলা করেন। ওই দিন আদালতের বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মামলাটি আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই দিন ঢাকায় মইনুল হোসেনকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গত ১৬ অক্টোবর বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশন চ্যানেলের একটি টক শোতে আলোচনার একপর্যায়ে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্য করেন মইনুল হোসেন। তাঁর এই মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন পর্যন্ত ২২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি মানাহানির মামলা এবং অপর ২টি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা হয়েছে।