দুদকে আবদুল আউয়াল মিন্টু

আবদুল আউয়াল মিন্টু ফাইল ছবি
আবদুল আউয়াল মিন্টু ফাইল ছবি

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নোটিশে সেখানে হাজির হয়েছেন। আজ সোমবার সকালে দুদকের উপপরিচালক সামছুল আলমের কাছে হাজির হয়ে অভিযোগ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন ।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার আবদুল আউয়াল মিন্টু দুদকে হাজির হতে নোটিশ পাঠান উপপরিচালক সামছুল আলম। চিঠিতে বলা হয়, প্রকৃত তথ্য গোপন করে একাধিক ভুয়া অডিট রিপোর্ট তৈরি করে ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে জমা দিয়ে ঋণ গ্রহণ, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তার সহযোগিতায় সন্দেহজনক লেনদেন ও বিদেশে অর্থ পাচার, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে মিন্টুর বিরুদ্ধে।

এই অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালক সামছুল আলম ও সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে।

দুদকের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিলে বিএনপির শীর্ষ আট নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। তাঁদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, সন্দেহজনক ব্যাংক লেনদেনসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে বলে অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়। যেসব নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়, তাঁরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির চার সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জা আব্বাস; দুই ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও এম মোর্শেদ খান; যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। এ ছাড়া এম মোর্শেদ খানের ছেলে খান ফয়সাল মোর্শেদ খানের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়।

এর মধ্যে তাবিথ আউয়ালকে সম্প্রতি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। এম মোর্শেদ খান, তাঁর স্ত্রী নাসরিন খান ও ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খানকে অন্য মামলায় দুদকে তলব করা হলেও তাঁরা সময় চেয়ে আবেদন করেছেন।

বিএনপি নেতা, সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং লালমনিরহাটের সাবেক সাংসদ আসাদুল হাবিব দুলুর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে গত ৮ মার্চ থেকে। বিএনপির সাবেক সাংসদ মোসাদ্দেক আলী ফালুর বিরুদ্ধে গত আগস্টে একটি অনুসন্ধান শুরু হয়। গত সেপ্টেম্বরে শুরু হয় আরেকটি অভিযোগের অনুসন্ধান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত আগস্টে অনুসন্ধান শুরু করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দফা তলব করা হলেও তিনি দুদকে হাজির হননি। দুদকের তলবকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদনও করেন। সেই আবেদন খারিজ হওয়ার এক দিন পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বনানীতে আমীর খসরুর মালিকানাধীন হোটেল সারিনায় অভিযান চালায় দুদক। ১৯ সেপ্টেম্বর বিএনপির সাবেক সাংসদ ও পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম এ হাসেমকে তলব করে চিঠি দেয় দুদক। একই দিন বিএনপি ঘরানার ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত লা-মেরিডিয়ান হোটেলের স্বত্বাধিকারী আমিন আহমেদ ভূঁইয়াকেও তলব করা হয়। চলতি মাসেই এম এ হাসেম ও আমিন আহমেদকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

সম্প্রতি সরকারদলীয় অন্তত সাতজন সাংসদের বিরুদ্ধে নতুন করে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। একই সঙ্গে সরকারের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টির (জাপা) পাঁচজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়।

চলতি বছরের ৫ এপ্রিল জাতীয় সংসদের হুইপ ও শেরপুর–১ আসনের সাংসদ আতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে তাঁকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এরপরই তাঁকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় দুদক। গত বছরের ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হলেও তাঁকে দায়মুক্তি দিয়েছে দুদক। শরীয়তপুর-১ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ এ বি এম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হলেও এর অগ্রগতি সম্পর্কে দুদকের কেউ তথ্য দিতে পারেননি। খুলনা-২ আসনের সাংসদ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে গত এপ্রিলে তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

স্বতন্ত্র সাংসদ (নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন) কামরুল আশরাফ খানের বিরুদ্ধেও এপ্রিলে অনুসন্ধান শুরু হয়। তাঁকেও দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করে। সরকারের শরিক দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে গত মাসে অনুসন্ধান শুরু করে তাঁকে তলব করে দুদক। দুদকের তলবে উপস্থিত না হয়ে তিনি চিঠি দিয়ে তাঁকে হাজিরা ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনের সাংসদ সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ মুক্তির বিরুদ্ধে এ বছরের মে মাস থেকে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টির আরেক সাংসদ মেহজাবিন মোর্শেদের বিরুদ্ধে বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায় অবশ্য মামলা হয়েছে। কুড়িগ্রাম-৪ আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে গত ২০ মে থেকে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। আরেক জাপা নেতা নীলফামারী-৪ আসনের সাংসদ মো. শওকত চৌধুরীর বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদকে গত ২২ মে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।