অজ্ঞাত লাশ শনাক্ত ১০ মিনিটেই

>

*অজ্ঞাতনামা মৃতদেহ শনাক্তে একটি পদ্ধতি চালু করেছে পিবিআই
*যাঁদের তথ্য ইসির ভান্ডারে আছে, তাঁদের পরিচয় বের করা যাবে
*পুলিশ সদর দপ্তরকে তথ্যভান্ডার গড়তে পরামর্শ পিবিআইয়ের

লাশকাটা ঘরে পড়ে আছে মরদেহটি। ঠিকানা নেই, তাই মর্গের খাতায় লেখা ‘অজ্ঞাত’। পুলিশের কাগজপত্রেও তাই। অথচ মৃত্যুর আগেও এই লোকের পরিচয় ছিল। তিনি কারও ভাই, বাবা বা অন্য কোনো স্বজন। পরিবারের লোকজন হয়তো তাঁর অপেক্ষায় বসে আছেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এ রকম অনেক অজ্ঞাতনামা মানুষের মৃতদেহ পাওয়া গেলেও তাদের পরিচয় শনাক্তে কোনো সমন্বিত উদ্বেগ নেই। শনাক্ত না হওয়ায় পরিবার যেমন তাদের খোঁজ পায় না, তেমনি মামলার রহস্যও উদ্‌ঘাটিত হয় না। সে কারণে অজ্ঞাতনামা মৃতদেহ শনাক্তে একটি পদ্ধতি চালু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তারা পুলিশ সদর দপ্তরকে এ জন্য একটি তথ্যভান্ডার গড়ে তোলারও পরামর্শ দিয়েছে।

ধানমন্ডির সোবহানবাগে গত ২৯ অক্টোবর বিকেলে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশার ধাক্কায় গুরুতর আহত হন অজ্ঞাতনামা এক নারী। অজ্ঞান অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। দুদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সেই অবস্থায়ই তাঁর মৃত্যু হয়। থানা-পুলিশ যখন তাঁর নাম–পরিচয় বের করতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন হাসপাতালে যান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা। ১০ মিনিটের মধ্যেই তাঁর পূর্ণাঙ্গ পরিচয় উদ্‌ঘাটন করেন তাঁরা। এই নারীর নাম মোছা. সুফিয়া বেগম (৫৫)। বাড়ি কিশোরগঞ্জের হেমন্তগঞ্জের মিঠাইমনা গ্রামে।

পিবিআই কর্মকর্তারা এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন নিজেদের একটি ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে। ‘মোবাইল ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার’ দিয়ে ওই নারীর আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করা হয়। এরপর নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডার থেকে তাঁর পরিচয়ের পুরো তথ্য নিয়ে আসা হয়। তাঁরা বলছেন, যেসব ব্যক্তির তথ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডারে আছে, তাঁদের পরিচয় ঘটনাস্থল থেকেই বের করা যাবে।
পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, এই প্রক্রিয়ায় কেবল অজ্ঞাতনামা মৃত ব্যক্তি নয়, সন্দেহভাজন যেসব ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে সন্দেহ থাকে, তাদের পরিচয়ও নিশ্চিত করা যাবে। তিনি বলেন, এই শনাক্তকরণ পদ্ধতিকে আরও কার্যকর করতে হলে নিখোঁজ ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নিয়ে দেশব্যাপী একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করতে হবে। এ ব্যাপারে তাঁরা পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দিয়েছেন।

যেভাবে কাজ করে পিবিআই
পিবিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যখনই কোনো এলাকায় অজ্ঞাতনামা মৃতদেহ পাওয়া যাবে, তখন সংশ্লিষ্ট থানার ওসি পিবিআইয়ের জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাচ্ছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অজ্ঞাত মৃতদেহের আঙুলের ছাপ সংগ্রহের জন্য ‘মোবাইল ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার’ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ নির্ধারিত দলকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হচ্ছে। দুই হাতের মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ ঘটনাস্থলে থেকেই জিপিআরএস বা থ্রি–জি ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যাচাই ও শনাক্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে পিবিআই সদর দপ্তরে অবস্থিত ‘এনআইডি ল্যাবে’। সেখানকার কর্মকর্তা তথ্যগুলো পিবিআই সদর দপ্তরের ‘সেন্ট্রাল অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার’ থেকে তা যাচাইয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনে রক্ষিত ‘ফিঙ্গার প্রিন্ট ডেটাবেইসে’ পাঠাচ্ছেন। এভাবে মাত্র ১০ মিনিটেই মৃত ব্যক্তির ছবি, ঠিকানাসহ তথ্য পাচ্ছেন পিবিআই সদস্যরা।

পরিচয় মিলেছে আরও
১৬ অক্টোবর মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল এলাকায় মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে ছিলেন এক বৃদ্ধ। বনানী থানা-পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। নাম–পরিচয় জানার আগেই সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ যখন বেওয়ারিশ হিসেবে তাঁর দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন পিবিআই কর্মকর্তারা তাঁর পূর্ণাঙ্গ পরিচয় বের করেন।

গত ২১ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢাকা রেলপথ থানা ও বনানী থানা থেকে পুলিশের উদ্ধার করা দুটি লাশ পাঠানো হয়। এর মধ্যে কেবল ঢাকা রেলপথ থানা থেকে পাঠানো মৃত ব্যক্তির নাম রিপন ও বাড়ি বগুড়া বলে জানা যায়। পিবিআইয়ের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম, মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা এবং উপপরিদর্শক (এসআই) ফরিদ উদ্দিন হাসপাতালে গিয়ে দুজনেরই পূর্ণাঙ্গ পরিচয় বের করেন।