'দেশে গণতন্ত্র চলে, তাই সব বন্ধ হয়ে যায়'

ভাঙা হাত নিয়ে বাসের জন্য গাবতলীতে অপেক্ষা করছেন সাভারের বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন। গাবতলী, ঢাকা, ৬ নভেম্বর। ছবি: আহমেদ দীপ্ত
ভাঙা হাত নিয়ে বাসের জন্য গাবতলীতে অপেক্ষা করছেন সাভারের বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন। গাবতলী, ঢাকা, ৬ নভেম্বর। ছবি: আহমেদ দীপ্ত

আদালতের কাজ সারতে ভোরে সাভারের বলিয়াপুর থেকে রওনা দেন মো. মারুফ। কিছু পথ রিকশায় কিছু পথ হেঁটে শেষে পুরান ঢাকার জজ কোর্টের পৌঁছান। তাঁকে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। কাজ শেষে শাহবাগ পর্যন্ত রিকশায় এবং বাকিটা পথ হেঁটে তিনি গাবতলী পৌঁছান। গাড়ি না পেয়ে রাগে গজ গজ করতে থাকেন। মারুফ প্রথম আলোকে বলেন,‘সমাবেশের কারণে গাড়ি বন্ধ রেখে কী লাভ? আমাদের মতো মানুষের সব ভোগান্তি। দেশে তো গণতন্ত্র চলে, তাই যখন-তখন সব বন্ধ হয়ে যায়।’

মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ ছিল। বেলা দুইটায় এই সমাবেশ শুরু হয়। তবে এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ভোর থেকেই রাজধানীতে ঢোকার পথগুলোতে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাবলিক বাহনগুলো সীমিত থাকায় চলাচলে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে যাতে কেউ যোগ দিতে না পারেন, সে জন্যই এ ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। অন্তত ছয়জন চালক ও চালকের সহকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাভারের নবীনগর এলাকায় ভোর থেকে গাড়ি ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া বন্ধ ছিল। এই কারণে ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে যাতে কেউ না যেতে পারে, সে জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের কারণে রাজধানীতে বাস চলাচলে সীমিত ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। গাবতলী, ঢাকা, ৬ নভেম্বর। ছবি: আহমেদ দীপ্ত
ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের কারণে রাজধানীতে বাস চলাচলে সীমিত ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। গাবতলী, ঢাকা, ৬ নভেম্বর। ছবি: আহমেদ দীপ্ত

গাবতলী থেকে সাইনবোর্ডগামী এম এম লাব্বাইক পরিবহনের চালকের সহকারী মো. সুমন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোর থেকেই রাজধানীতে গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। মিটিংয়ের কারণে গাড়ি সব বন্ধ কইরা দিছে। দুপর দুইটার পর থেকে আবার গাড়ি ছাড়ছে। মালিকে বন্ধ কইরা দিলে কী আর করা।’

গাবতলীর বালুর মাঠের উল্টো পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন একটি প্রতিষ্ঠানের সুইং অপারেটর মো. মোজাম্মেল হোসেন। দুর্ঘটনায় তার ডান হাত ভেঙেছে। সকালে পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসককে দেখাতে সাভারের পলতাসুতি এলাকা থেকে রওনা দেন। কিছু দূর বাস, কিছু পথ হেঁটে এবং সিএনজিতে বাড়তি ভাড়া দিয়ে তিনি হাসপাতালে পৌঁছান। ভাঙা হাত নিয়ে ফিরতি পথেও তাঁকে একই সমস্যায় পড়তে হয়। মোজাম্মেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এ রকম ভোগান্তি হবে জানলে আজ আর বেরই হতাম না। এই ভোগান্তি কী আর ভালো লাগে। সমাবেশ হোক ভালো কথা, গাড়ি বন্ধ করার কী দরকার।’

রাজধানীতে প্রবেশের অন্যতম পথ গাবতলী। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন দূরত্বে ও গন্তব্যে যাবেন বলে মানুষ বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। কাঙ্ক্ষিত বাস না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কেউ যাবেন সাভার, কেউ যাবেন পাটুরিয়া। অনেকে ভোগান্তি এড়াতে রিকশায় চেপেছেন।

গাবতলীতে প্রায় আট ঘণ্টা যান চলাচল সীমিত থাকে। তবে দুপুর দুইটার দিকে ঢাকায় ঢুকতে থাকে বিভিন্ন দূরপাল্লার ও ঢাকায় চলাচল করা বিভিন্ন পথের বাস। এ সময় শুরু হয় যানজট। গাবতলী বালুর মাঠ থেকে শ্যামলী পর্যন্ত যানজট দেখা যায়। হানিফ পরিবহনের এক চালক বলেন, ‘নবীনগরে অনেক জ্যাম আছে। সমাবেশের কারণে ভোরে গাড়ি ঢাকায় ঢুকতে দেয় নাই।’