৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ফেরতের রায় স্থগিত

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

এক-এগারোর সময় (২০০৭ সালে) ব্যক্তি ও বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে আদায় করা ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা সংশ্লিষ্টদের ফেরত দেওয়ার রায় স্থগিত করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। অর্থ ফেরতের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) বাংলাদেশ ব্যাংকের করা আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করে আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

ওই অর্থ ফেরত পেতে ব্যক্তি ও বিভিন্ন কোম্পানি পৃথক ১১টি রিট আবেদন করেছিল, যার ওপর শুনানি নিয়ে ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে রিট আবেদনকারী ব্যক্তি ও কোম্পানিকে ওই অর্থ ৯০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক পৃথক ১১টি আপিল করে। গত বছরের ১৬ মার্চ ১১টি আপিল খারিজ করে রায় দেন আপিল বিভাগ। ফলে অর্থ ফেরতের রায় বহাল থাকে।

এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের শেষ দিকে আবেদন করে। অন্যদিকে ওই অর্থ ফেরত না পেয়ে সংশ্লিষ্ট ১১টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন করেন। এসবের ওপর তিন দিন শুনানি নিয়ে আজ আদেশ দেওয়া হয়।

আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ব্যক্তি ও বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষে অন্যদের মধ্যে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী রোকন উদ্দীন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, আবদুল মতিন খসরু, আহসানুল করিম ও খায়রুল আলম চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অর্থ আদায়ের জন্য রিট আবেদন চলে না, কোনো অর্থ ফেরত পেতে অর্থ আদায়ের (মানি স্যুট) মামলা করতে হয়, যা দেওয়ানি আদালতে করতে হয়। এটিসহ সাতটি যুক্তিতে পুনর্বিবেচনা আবেদন করা হয়। আপিল বিভাগ পুনর্বিবেচনার আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন।

১১টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ফেরত দিতে এর আগে দেওয়া রায় আপিল বিভাগ মঙ্গলবার স্থগিত করেছেন বলে জানান আইনজীবী খায়রুল আলম চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন আদালত এ বিষয়ে বিস্তারিত শুনবেন। এই শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপিল বিভাগের আগে দেওয়া রায় স্থগিত করা হয়েছে এবং আদালত অবমাননার আবেদনটি নথিভুক্ত রাখা হয়েছে।

আইনজীবী সূত্র বলেছে, সেনাসমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে অগ্রিম আয়কর হিসেবে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করা হয়। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংরক্ষিত সরকারি কোষাগারে ওই টাকা জমা দেওয়া হয়।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, এস আলম স্টিলস লিমিটেডসহ অন্যরা ৬০ কোটি টাকা, দ্য কনসলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি লিমিটেড এবং বারাউরা টি কোম্পানি লিমিটেড ২৩৭ কোটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজার ২ টাকা ১৭ পয়সা, মেঘনা সিমেন্ট মিলস ৫২ কোটি টাকা, বসুন্ধরা পেপার মিলস লি. ও অন্যরা ১৫ কোটি, ইউনিক ইস্টার্ন (প্রাইভেট) লিমিটেড ৯০ লাখ, বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড ৭ কোটি ১০ লাখ, ইউনিক সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রাইভেট) লি. ও অন্যরা ৭০ লাখ, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস ১৭ কোটি ৫৫ লাখ, ইউনিক ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মো. নূর আলীসহ অন্যরা ৬৫ লাখ, বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড ৭ কোটি ১০ লাখ, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডসহ অন্যরা ৩৫ কোটি, ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডসহ অন্যদের ১৮৯ কোটি টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।