ঘর সামলাতে ব্যস্ত বিএনপি, আ.লীগ ব্যস্ত নির্বাচন নিয়ে

উপরের বাঁ দিক থেকে জুনাইদ আহ্‌মেদ,কাজী গোলাম মোর্শেদ,এম ইউসুফ আলী,মজিবুর রহমান,শফিকুল ইসলাম,শহিদুল ইসলাম
উপরের বাঁ দিক থেকে জুনাইদ আহ্‌মেদ,কাজী গোলাম মোর্শেদ,এম ইউসুফ আলী,মজিবুর রহমান,শফিকুল ইসলাম,শহিদুল ইসলাম

১৯৭৩ সালের পর ২০০১ পর্যন্ত নাটোর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের কেউ জিততে পারেননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে সাংসদ হন জুনাইদ আহ্‌মেদ। আওয়ামী লীগের এই তরুণ নেতা ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জেতেন। বর্তমানে তিনি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। এবার তিনি ছাড়াও আরও দুজন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

২০০৮ সালের আগে এখানে টানা চারবার জয়ী হয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা। এবার আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় দলটি। তবে নির্বাচনের প্রস্তুতির চেয়ে স্থানীয় নেতা নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্ব মেটাতে সময় যাচ্ছে বেশি।

বিএনপি

১৯৭৩–এর পর ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই আসনটি বিএনপি ও জামায়াতের দখলে ছিল। বিএনপি এখন অনেকটা অভিভাবকহীন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মারা যাওয়ার পর এই অবস্থার শুরু। গত বছরের ২৮ অক্টোবর মজিবুর রহমান সভাপতির দায়িত্ব নেন। কিন্তু গত ৭ জানুয়ারি সাধারণ সম্পাদক শামীম আল রাজির মৃত্যুর পর আবারও নেতৃত্ব সংকটে পড়ে বিএনপি। ওই পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব নেন ইব্রাহিম খলিল। ১৮ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে ঢাকায় বসে পৌর বিএনপির সভাপতি দাউদার মাহমুদকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। এ নিয়ে সিংড়ায় দাউদারবিরোধী জোট গঠিত হয়। তাঁরা দুলুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এর মাঝে ১৮ অক্টোবর জেলা বিএনপি সিংড়ার পৌর বিএনপির কমিটি বিলুপ্তি করে। এতে কোন্দল আরও জোরদার হয়েছে।

দলের সংকট সম্পর্কে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, সিংড়া বিএনপি এককাট্টা রয়েছে। জেলার একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধু একজন নেতার সঙ্গে অন্যদের মতবিরোধ হয়েছে। এটা আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না।

তবে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই কোন্দলের মাঝে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন অন্তত সাতজন নেতা। তাঁরা হচ্ছেন জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাবেক সাংসদ কাজী গোলাম মোর্শেদ, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মজিবুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এম ইউসুফ আলী, সহসভাপতি আলী আজগর, জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন, ড্যাবের যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন।

কাজী গোলাম মোর্শেদ বলেন, ‘আমি টানা তিনবার এই আসনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছি। দলের ও প্রতিপক্ষ দলের কারও ক্ষতি করিনি। দল আমাকে আবারও মনোনয়ন দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

আলী আজগর বলেন, ‘আমি দলের সাধারণ কর্মীদের নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসি। তাঁদের পাশে থাকি। তাই সবাই চাচ্ছে দলের মঙ্গলের স্বার্থে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।’

এম ইউসুফ আলী বলেন, এই আসনে বিএনপির নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি। দলের নেতা–কর্মীদের দুঃসময়ে তিনি সঙ্গে থেকেছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। দলের উচ্চপর্যায়ে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ আছে এবং তিনি মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।

উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে বুলেট বলেন, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলককে মোকাবিল করতে হলে তরুণ, মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন নেতাকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বাছাই করা দরকার। ইউসুফ আলীর এসব গুণ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমানের মতে, প্রার্থী নিয়ে এ আসনে আওয়ামী লীগ স্বস্তিতে আছে। কারণ, এখানে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদের কোনো বিকল্প নেই। তাঁকে ঘিরেই চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী জুনাইদ আহ্‌মেদ বলেন, ‘উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দিয়েই আমি বিএনপি-জামায়াতকে মাঠছাড়া করেছি। সিংড়া এখন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। তাই আগামী নির্বাচনে দলের সাফল্য আসবে আমার হাত ধরেই।’

তবে জুনাইদ আহ্‌মেদকে চ্যালেঞ্জ করতে মাঠে আছেন শফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম। শফিকুল সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। মনোনয়নের আশায় সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে নৌকায় ভোট চাইছেন। এসব কর্মসূচিতে তাঁর সঙ্গে থাকছেন পৌর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহসভাপতি শাজাহান আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মশিউর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রেজাউল ইসলাম প্রমুখ।

শফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁরা কার্যত তুষের আগুনে জ্বলছেন। তাঁদের সাংগঠনিক কষ্টের কথা এলাকার মানুষ জানলেও কেন্দ্রীয় নেতারা জানেন না।

শহিদুল এই আসনের সাবেক সাংসদ প্রয়াত আশরাফুল ইসলামের ছেলে। আশরাফুল ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে এখানে সাংসদ হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

শহিদুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধুর সহচর ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের জন্ম। আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

অন্যান্য দল

জেলা জামায়াতের আমির বেলাল-উজ-জামান এই আসনে নির্বাচন করবেন বলে আলোচনা রয়েছে। এ ছাড়া সিংড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) আহ্বায়ক আনিসুর রহমান ও সদস্যসচিব আবদুস সালাম গণসংযোগ করে চলেছেন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে নির্বাচন করতে পারেন সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। বিকল্পধারা বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রকিব উদ্দিনও গণসংযোগ করছেন। ইসলামী আন্দোলন এখানে তাদের প্রার্থী হিসেবে ঠিক করেছে দলটির উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মোস্তফা ওয়ালিউল্লাহ সেলিমকে।