শিগগিরই মুক্তির আশা আইনজীবীর, আপিল রোববার

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা আলোকচিত্রী শহিদুল আলম জামিন পেয়েছেন। বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়াল ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার শহিদুল আলমকে জামিন দিয়ে রায় দেন। শহিদুল আলমের জামিন প্রশ্নে রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে এই রায় দেওয়া হয়।

জামিন হওয়ায় এখন সরকার শিগগিরই শহিদুল আলমের মুক্তির ব্যবস্থা করবেন বলে আশা করছেন তাঁর আইনজীবী সারা হোসেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রথম আলোকে বলেছেন, জামিন মঞ্জুর করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে। আগামী রোববার আবেদনটি করা হবে বলে আশা করছেন তিনি।

শহিদুল আলম
শহিদুল আলম

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে করা ওই মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন নামঞ্জুরের পর হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন শহিদুল আলম। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ অক্টোবর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তাঁর জামিন প্রশ্নে রুল দেন। কেন তাঁকে জামিন দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এর ওপর শুনানিতে ১ নভেম্বর হাইকোর্ট আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। পরে শহিদুল আলমের আইনজীবীরা আবেদনটি ওই বেঞ্চে উপস্থাপন করেন। আজ শুনানি নিয়ে রায় দেওয়া হয়।

আদালতে শহিদুল আলমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আলী জিন্নাহ।

রায়ের পর সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঘোষিত রায়ে বলা হয়, অনেক দিন ধরে আবেদনকারী (শহিদুল আলম) আটক আছেন, ১০২ দিন হয়েছে। রিমান্ডে নেওয়ার পর তিনি কোথাও কখনো স্বীকার করেননি যে ওই রকম কোনো বক্তব্য তিনি দিয়েছেন, যা এজাহারে রয়েছে। এজহারে উল্লেখ করা তাঁর বক্তব্য ও ফেসবুক লাইভে শহিদুল আলমের দেওয়া বক্তব্যে অসংগতি রয়েছে। শহিদুল আলম এই উপমহাদেশে এমনকি সারা বিশ্বের একজন নামকরা আলোকচিত্রী, তাঁর বয়স ৬৩ বছর। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে আদালত জামিন দিয়েছেন।

এর আগে শুনানিতে সারা হোসেন বলেন, এজাহারে শহিদুল আলমের বক্তব্য হিসেবে তুলে ধরা বাক্যের সঙ্গে ফেসবুক লাইভের লিঙ্কে আসা বক্তব্যে মিল নেই। এজাহারে লিঙ্কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, অথচ এজাহারে তুলে ধরা বক্তব্যের সঙ্গে ওই লিঙ্কে থাকা বক্তব্যেও মিল নেই।

আদালত বলেন, অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তখন সারা হোসেন বলেন, এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। রুল হয়েছে এখনো লিখিত কোনো জবাব পাইনি। এজাহারে যে লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে তাতে এ কথাও নেই যে শহিদুল আলম সরকার উৎখাত বিষয়ে কথা বলেছেন।

শহিদুল আলমের জামিনের আরজি জানিয়ে আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, আইনের ৫৭ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে, অথচ এর অপপ্রয়োগের কারণে তা বাতিল করে ইতিমধ্যে নতুন আইন হয়েছে।

আল-জাজিরায় শহিদুল আলমের সাক্ষাৎকারের বক্তব্য তুলে জামিনের বিরোধিতার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, উনি এ–ও বলেছেন সরকার পালানোর পথ পাবে না। তাঁর বিরুদ্ধে উসকানি বা মিথ্যা বলে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগ, যা ৫৭ ধারার আওতায় পড়ে। তাঁকে জামিন দেওয়া এমন অপরাধের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

জামিনের আরজি জানিয়ে সারা হোসেন বলেন, শহিদুল আলম নিজের কাজের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে দেশকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ১০২ দিন ধরে ৬৩ বছর বয়সী শহিদুল আলম কারাগারে আছেন। মামলায় এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। উনি বিচারের মুখোমুখি হবেন। তাঁর চোখে দেখতেও অসুবিধা হচ্ছে। পরে আদালত রায় ঘোষণা শুরু করেন।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ প্রচারের অভিযোগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় গত ৬ আগস্ট শহিদুল আলমকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এর আগের দিন রাতে ধানমন্ডির বাসা থেকে তাঁকে তুলে নেয় ডিবি। সাত দিনের রিমান্ড শেষে গত ১২ আগস্ট শহিদুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন নিম্ন আদালত। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। ওই মামলায় ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ শহিদুল আলমের জামিন নাকচ করেন। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদনটি করেন।