আসন পুনরুদ্ধার করতে চায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি

ঢাকা-১ আসন (দোহার-নবাবগঞ্জ) বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছয়টি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে চারবার জয় পেয়েছে বিএনপি। একবার করে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (জাপা)। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চায় আসন উদ্ধার করতে। আর জাপা চায় জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে।

এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলের সভানেত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক নূরে আলম উজ্জ্বল এবং ফ্রান্স আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন মেট্রো আওয়ামী লীগের সহসভাপতি যোসেফ কেনেডি গমেজ।

বিএনপি থেকে চারজন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক, আবদুল মান্নানের মেয়ে মেহনাজ মান্নান এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা হুদা। বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সালমা ইসলামও দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

তৎপর আওয়ামী লীগ

মামলা–হামলার ভয় না থাকায় প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই মাঠ গরম করে রেখেছেন সালমান এফ রহমান। তিনি ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা নির্মল রঞ্জন গুহ ও আওয়ামী লীগের নেতা নূরে আলম দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আবদুল মান্নান খানের কাঁধে ভর করে বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নানকে পরাজিত করে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সালমা ইসলামের কাছে হেরে আসনটি হাতছাড়া হয়ে যায় আওয়ামী লীগের। দলীয় কোন্দলের কারণে মান্নান খান পরাজিত হয়েছিলেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। বিগত পাঁচ বছর দল ক্ষমতায় থাকলেও অনেকটা অভিভাবকহীন ছিলেন দোহার-নবাবগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তাই জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছাড়তে নারাজ দলীয় নেতা–কর্মীরা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা প্রথম আলোকে জানান, দীর্ঘ পাঁচ বছর এই আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ না থাকায় তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। সাংসদ সালমা ইসলাম দোহার-নবাবগঞ্জে গ্যাস দেওয়ার কথা বলে নির্বাচিত হয়েছিলেন, কিন্তু তা তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মান্নান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের ব্যাপারে কোনো কিছু বলেননি বিধায় আমি দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করিনি।’

আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘ম্যাডাম শেখ হাসিনার কথাতেই ঢাকা-১ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। আমিই এই আসনের নৌকার প্রার্থী হব বলে শতভাগ আশাবাদী।’

আওয়ামী লীগ নেতা নূরে আলম বলেন, ‘নেত্রীর কথামতোই আমি ঢাকা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। এ ব্যাপারে ম্যাডাম যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমি তা মেনে নেব।’

নীরব বিএনপি

দোহার-নবাবগঞ্জ একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে সরকারের পালাবদলে এবং নিজেদের কোন্দলে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দলীয় নেতা–কর্মীদের। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক মামলা তো আছেই। ইতিমধ্যে দলের চারজনকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। তবে তাঁরা কেউই মাঠে নেই। সাবেক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান এবারও ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশী। সর্বশেষ ২০০৮ সালের পর থেকে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তবে এখনো প্রবীণ ভোটারদের কাছে তিনি জনপ্রিয়। তাঁর মেয়ে মেহেনাজ মান্নানও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এদিকে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাকও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দলীয় তৎপরতা তেমন না থাকলেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা আসনটি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আশাবাদী।

আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আসন থেকে দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে, এটাই আমার আশা। আর যদি আমার চেয়ে কাউকে যোগ্য মনে করেন, তাহলে তাঁকে দেবে। এ নিয়ে আমার কোনো মতভেদ নেই। আমি ওই প্রার্থী তথা ধানের শীষের হয়ে কাজ করব।’

খন্দকার আবু আশফাক বলেন, ‘মনোনয়নের ব্যাপারে ম্যাডাম খালেদা জিয়া আমাকে বলেছেন, ঢাকা-১ আসন থেকে আমাকেই মনোনয়ন দেবেন। দোহার-নবাবগঞ্জে জনগণের সঙ্গে ছিলাম, এখনো আছি। আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে আমি মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হলে দোহার-নবাবগঞ্জকে মডেল উপজেলায় পরিণত করব।’

জাপার একক প্রার্থী

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সালমা ইসলাম এই আসনে জাপার একমাত্র মনোনয়নপ্রত্যাশী। দশম সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সালমা ইসলামের জয়লাভের পর থেকে বেশ চাঙা ছিল জাতীয় পার্টি। এ বিষয়ে জানতে সালমা ইসলাম মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।