আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থী প্রায় নিশ্চিত

সিমিন হোসেন রিমি, শাহ রিয়াজুল হান্নান, মোতাহার হোসেন, আলম আহমেদ
সিমিন হোসেন রিমি, শাহ রিয়াজুল হান্নান, মোতাহার হোসেন, আলম আহমেদ

গাজীপুর জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের চারটিতে কোন দল থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন, তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে গাজীপুর-৪ আসনের ক্ষেত্রে এটা অনেকটাই নিশ্চিত। আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমির। বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন প্রয়াত হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান।

শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত গাজীপুর-৪ আসন। মোট ভোটারসংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৪। পুরুষ ভোটার হচ্ছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২৫। নারী ভোটার ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩২৯।

তাজউদ্দীনের পরিবার থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হচ্ছে বলে আলোচনা থাকলেও এখানে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন চারজন। তাঁরা হলেন বর্তমান সাংসদ সিমিন হোসেন, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আলম আহমেদ, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লা এবং আওয়ামী লীগের নেতা হাবিবুর রহমান আকন। বিএনপি থেকে শাহ রিয়াজুল হান্নান, জাতীয় পার্টি থেকে আনোয়ারা কবির ও মোশারফ হোসেন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

দলীয় নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এলাকায় ভোটের আমেজ চলে এসেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানাভাবে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। সভা–সমাবেশ, উঠান বৈঠক, ঘরোয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন। স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে কাপাসিয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি তাজউদ্দীন আহমদ এবং তাঁর পরিবারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়ে আসছে। আর ১৯৯১ সাল–পরবর্তী এখানে বিএনপির রাজনীতি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় প্রার্থীরাই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তাজউদ্দীন আহমদের একমাত্র ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বিএনপির প্রার্থী হান্নান শাহকে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেন। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে সোহেল তাজ বিএনপির প্রার্থী আবদুল মজিদকে পরাজিত করে ফের সাংসদ নির্বাচিত হন এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিছুদিন পর তিনি প্রথমে মন্ত্রিত্ব থেকে এবং পরে সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করে বেশ আলোচিত হন। ২০১২ সালের উপনির্বাচনে সোহেল তাজের বড় বোন সিমিন হোসেন তাঁরই চাচা আফসার উদ্দীন আহমদ খানকে হারিয়ে নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সিমিন হোসেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনোয়ার হোসেনকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমানে সিমিন হোসেন ও আলম আহমেদকে মাঠে বেশ তৎপর দেখা যাচ্ছে। সিমিন হোসেন বলেন, ‘এলাকার মানুষ যাতে ভালোভাবে আয়-রোজগার করতে পারে, শান্তিতে বসবাস করতে পারে তারই চেষ্টা করেছি। কাপাসিয়ার মানুষ আমার কাজের মূল্যায়ন করবে।’ তিনি বলেন, ‘দলের মনোনয়ন চেয়েছি, মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারেও আশাবাদী। বস্তুগত উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের মনোজগতের উন্নয়ন আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আমি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই পড়ার কর্মসূচিকে বিস্তৃত করব। এখন ৪৫টি বিদ্যালয়ে এটা চালু আছে। গত ছয় বছরে আমি এলাকার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সব রকমের উন্নয়নকাজ করেছি। এই উন্নয়নপ্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’

আলম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এলাকায় মরিয়ম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। মসজিদ করেছেন, বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলেন, ‘নৌকা আমার প্রতীক, নৌকা যেখানে, আমি সেখানে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমি নৌকার মনোনয়ন চেয়েছি। দল মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করব।’

শাহ রিয়াজুল বলেন, ‘বাবা (হান্নান শাহ) জীবিত থাকার সময় থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তিনি মারা যাওয়ার পর দলের সঙ্গে আরও ভালোভাবে সম্পৃক্ত হয়েছি। দলের সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়েছি। মনোনয়ন পাওয়ার পরই সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করব।’