শিক্ষকনেতারাও নির্বাচনী মাঠে

আবদুর রশীদ, শাহজাহান আলম, ওবায়দুল ইসলাম,  সেলিম ভূঁইয়া
আবদুর রশীদ, শাহজাহান আলম, ওবায়দুল ইসলাম, সেলিম ভূঁইয়া

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন অন্তত ১৫ জন শিক্ষকনেতা।

আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন অন্তত ১৫ জন শিক্ষকনেতা। দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর তাঁরা এখন প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছেন। নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান শিক্ষকনেতারা।

আওয়ামী লীগের হয়ে যেসব শিক্ষকনেতা নির্বাচন করতে চান, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির (বাকশিস) সভাপতি আসাদুল হক। তিনি কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে নির্বাচন করতে চান। এই আসনের বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির নেতা শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক।

রাজধানীর তেজগাঁও মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আসাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এলাকায় প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি। নির্বাচিত হয়ে এখন এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখতে চান তিনি।

আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে চান স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ-সরাইল) আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এই আসনের বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধা।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি শাহজাহান আলম প্রথম আলোকে বলেন, দেশে লাখ লাখ শিক্ষক থাকলেও সংসদে সেই অর্থে শিক্ষকদের প্রতিনিধি নেই। এ ছাড়া তাঁর আসনে ১৯৭৩ সালের পর আওয়ামী লীগ জিততে পারেনি। এ জন্য নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে দুঃখ–বেদনা আছে, সেটা তিনি ঘোচাতে চান।

রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদ জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। নির্বাচন করতে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় জনসংযোগ চালিয়ে আসছেন। আবদুর রশীদ বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাহী সভাপতির পাশাপাশি তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। এই আসনের বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির মোহা. মামুনুর রশিদ।

নেত্রকোনার সুসং কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসন থেকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য।

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন (ভোলা-৪), আইন বিভাগের শিক্ষক ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান সেলিম মাহমুদ (চাঁদপুর-১)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আবু ইউসুফ মো.আবদুল্লাহ সাতক্ষীরা-৩ আসনে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন। কুমিল্লা–৫ (বুড়িচং–ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে রয়েছেন অধ্যাপক মোস্তফা কামাল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য। এ ছাড়া বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির নীলফামারী জেলা কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা এবারও মনোনয়নের চেষ্টা করছেন। তিনি নীলফামারী-৩ আসনের বর্তমান সাংসদ।

খুলনা-৫ আসনের সাংসদ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দও স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক। খুলনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক এই সভাপতি এবারও মনোনয়ন চাইবেন।

বিএনপি থেকে যাঁরা

ঢাকা-৫ (ডেমরা-যাত্রাবাড়ী) এবং কুমিল্লা-৩ (হোমনা-তিতাস) আসনের যেকোনো একটিতে নির্বাচন করার জন্য চেষ্টা করছেন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া। রাজধানীর এ কে স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক এই অধ্যক্ষ দুটো আসনের জন্যই দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সেলিম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য তিনি সংসদে গিয়ে কথা বলতে চান। এ জন্যই তিনি প্রার্থী হয়েছেন।

দিনাজপুর-২ (বোচাগঞ্জ-বিরল) আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করতে চান শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের দিনাজপুর জেলা কমিটির সভাপতি মনজুরুল ইসলাম। তিনি বিরলের মাইনুল হাসান কলেজের প্রভাষক। একই সঙ্গে তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিরও সদস্য।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের বরিশাল বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন পিরোজপুর–১ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। তিনি স্থানীয় তেজদাসকাঠী কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

জয়পুরহাটের শহীদ জিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল হক জয়পুরহাট-১ (সদর ও পাঁচবিবি) আসনে, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে শিক্ষক মোখলেছুর রহমান, মেহেরপুর-১ (সদর) আসনে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অতিরিক্ত মহাসচিব মো. জাকির হোসেন নির্বাচন করতে চান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের আহ্বায়ক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তিনি বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকা অবস্থায় কীভাবে নির্বাচন করবেন, জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখনো বিষয়টি তিনি পরিষ্কার নন। তবে যত দূর শুনেছেন ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পদত্যাগ করেই নির্বাচন করতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক মামুন আহমেদের পক্ষে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন ফরম কেনা হয়েছে। তিনি জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সভাপতি।