জেনে-শুনে-বুঝে মন্তব্য করুন

মো. মোশাররফ হোসেন, ইকবাল মাহমুদ
মো. মোশাররফ হোসেন, ইকবাল মাহমুদ

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তাঁর বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ উল্লেখ করে তাঁকে জেনে, শুনে, বুঝে মন্তব্য করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

আজ সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না, তারা ধোয়া তুলসীপাতা। আমরা বুক ফুলিয়ে স্বীকার করি আমাদের এখানে দুর্নীতি আছে। আমরা ব্যবস্থাও নিই। আমাদের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি গেছে। অনেকের বিভাগ পরিবর্তন হয়েছে। অনেককে অন্য কোথাও চাকরিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ৮ নভেম্বর আয়কর বিভাগে দুর্নীতির উৎস এবং তা প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা পাঠানো হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। তাতে দুর্নীতির ১৩টি উৎস এবং সার্বিক দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৩ দফা সুপারিশ ছিল। ওই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া উষ্মা প্রকাশ করেন। ১১ নভেম্বর আয়কর মেলা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে দুদকেও নানা ধরনের দুর্নীতি বের হবে। তিনি বলেন, শুধু কর ও শুল্ক বিভাগকে লক্ষ্য করে কোনো কিছু করা হলে এবং এসব বিভাগে দুদকের অফিস করতে চাইলে, সেটা হতে দেওয়া হবে না।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এনবিআরের দুর্নীতি দূর করা, কারণ বা উৎস অনুসন্ধান আমাদের কাজ নয়। কাউকে ধরে জেলে দেওয়াও আমাদের কাজ নয়। আমরা স্পাই (গোয়েন্দা) নই। এটা আপনার কাজ। আপনার দায়িত্ব। আপনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, “টেল আস” (আমাদের বলুন)।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘সবকিছু স্বীকার করতে সাহস লাগে। ভিশন লাগে। আমরা চাই সবাই দুদকের দুর্নীতির উৎস খুঁজুক। আমরা সবার সমালোচনা ইতিবাচকভাবেই দেখি।'

আয়কর বিভাগের দুর্নীতির কারণ চিহ্নিত করা ও সুপারিশ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের কাছে দেওয়া ওই অনুসন্ধান ও সুপারিশের বিষয়টি আমলে নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। তিনি আরও বলেন, ‘এটা শতভাগ সঠিক না-ও হতে পারে। আমরা আমাদের প্রতিবেদনের কোথাও কি লিখেছি যে আমরা এনবিআরে আমাদের অফিস বসাতে চাই? এটা নিয়ে হঠাৎ করা তাঁর (এনবিআর চেয়ারম্যান) মন্তব্য হাস্যকর।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনে যাঁরা জনপ্রতিনিধি হবেন, তাঁরা হলফনামায় সম্পদের সঠিক হিসাব দেবেন বলে তাঁর বিশ্বাস। কেউ সঠিক তথ্য না দিলে তাঁর বিরুদ্ধে দুদক অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, কোনো দুর্নীতিবাজকে দেশের মানুষ নির্বাচিত করবে। যদি এমন কিছু হয়, তাহলে আমরা আমাদের আওতায় আনার চেষ্টা করব এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনকারীদের চরিত্র জনসমক্ষে তুলে ধরব।’

দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়ার বিষয়ে ইসিতে দুদকের সুপারিশ থাকবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘না, সুপারিশ আমাদের থাকবে না। কারণ হচ্ছে, আরপিও অনুসারে যে কেউ নির্বাচন করতে পারেন, তাতে আমাদের কিছু করার নেই। সেটার সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ইসিকে কিছু বলব না বা সুপারিশ করব না। এটা তাদের বিষয়। সাজাপ্রাপ্তদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।’